কবিতার ছন্দ যেন মন কে দোলা দেয়, "আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।"
ছুটি মানেই আনন্দ, বন্ধের দিন মানেই লাগামহীন ছুটে চলা। হোক সেটা বাস্তবে অথবা কল্পনায়।
ছুটি বা বন্ধে লেখাপড়ার কৌশল
বন্ধে লেখা পড়া মানে তাল গাছ থেকে পড়া! তাই প্রয়োজন বাড়তি এক কৌশল। করোনা সহ নানা রকম দূর্যোগে ব্যপারটি আরো জটিল। আজকের আলোচনা এ সকল কৌশল নিয়ে।
ছুটির দিনের পড়াশোনা |
আধুনিক এই সমাজের সাথে আগেকার অনেক তফাৎ । তখন ছুটি মানে ছিল গোল্লাছুট, মারবেল আর কানামাছি খেলা। মামার বাড়ি, দাদার বাড়ি আর বন-কাঠালে আড্ডা দেওয়া, আর বন বনানির কোলে বসে নানারকম ফল-ফলালির স্বাদ নেওয়া। এটা বলছি মোবাইল ফোন আসার আগেকার কথা। আধুনিক সমাজ মোবাইল বদলে দিয়েছে এমন ভাবে যেন কয়েক প্রজন্ম ডিঙিয়ে আজকের এই আধুনিক সমাজ। এখন কেও আর আমকুড়াতে সুখ পায় না, না পায় মামার বাড়ি গিয়ে। পেলেও আগেকার মত নয়। এখন যত সুখ মোবাইল, কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের বিশাল দুনিয়াই। এই যুগে শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু কোন এক গ্রামের কোন এক বিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ দুনিয়া জোড়া। এটি বিশাল এক বিশ্বগ্রাম, গ্লোবালাইজেশনের ফল। কম্পিটিশন যেন তুঙ্গে। এখন আর ছুটির দিনে বসে থাকলে চলে না। আনন্দের পাশা পাশি জ্ঞানার্জনে সকলে আজ ব্যস্ত। ব্যপারটি কেমন জানি সিস্টেমেটিক্যাল।
ছুটি মানেই গা ছেড়ে পড়ে থাকা এটা একেবারেই নয়। তাহলে আধুনিক কম্পিটিশনের যুগে পিছিয়ে পড়বে কুড়ে আর আনন্দে গা ভাসানো ছাত্র-ছাত্রী'রা। কিন্তু মন তো আর সিস্টেমে থাকতে চাই না, ছুটি মানে যে আনন্দ। তাই ছুটির দিনে আমাদের আনন্দের সাথে তাল মিলিয়ে কিভাবে পড়াশোনা করা যাই তার একটা পরিকল্পনা আবশ্যক।
পরিকল্পনা তো অনেক ভাবেই করা যাই। তবে ছুটির দিনে পড়াশোনার পরিকল্পনা এমন হওয়া চাই যেন আনন্দের মাধ্যমেই তা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
তাহলে শুরু করা যাক আমাদের পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা।
- ১. ছুটির দিনে পড়ার প্রস্তুতি হিসাবে আমাদের প্রথম কাজ মোবাইলে পাঠ্য বই সহ নানারকম বই অনলাইন, বা বন্ধু-বান্ধবী বা শিক্ষকদের নিকট থেকে নিয়ে নেওয়া। ডিজিটাল বই নানা প্রকারে থাকতে পারে সেটা পিডিএফ বা এপলিকেশন যেকোন ভাবে। গুগোল মামাকে চার্চ দিলে এসকল বই অনলাইন থেকে ডাউনলোড করা যেতে পারে। তাছাড়া নানারকম শিক্ষামূলক ওয়েব সাইটেও বই পাওয়া যাই। আমরা ইচ্ছা করলে https://1timeschool.com এই ওয়েবসাইট থেকে বই ডাউনলোড করে নিতে পারি। মোবাইল প্লেস্টোরেও এগুলো পাওয়া যাই।
- ২. নানারকম গেম রয়েছে যা শিক্ষা মূলক। মোবাইলের play store থেকে আমরা এ সকল গেম নামিয়ে নিতে পারি। এছাড়া যারা কম্পিউটার ব্যবহার করি তারা গুগলে সার্চ দিলে অসংখ্য শিক্ষামূলক ফ্রি গেম ডাউনলোড করতে পারব। letter game, word game এমন শিক্ষামূলক শব্দ টাইপ করে সার্চ করলে অনেক অনেক শিক্ষা গেম প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে, যা সম্পূর্ণ ফ্রিতে ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে। খোজ নিলে অনেক বন্ধুর কাছেও এমন গেম পাওয়া যাই।
- ৩. ইন্টারনেট বিশ্বকে করেছে একটি পাঠশালা। এর কল্যানে এখন ঘরে বসেই নানা তথ্য জানা যায়। মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করে আমরা অনলাইনে নানা রকম শিক্ষা সাইট থেকে আনন্দের সাথে সাথে শিক্ষাও গ্রহন করতে পারি। বিশ্ব জ্ঞান কোষ http://bn.wikipedia.org বা https://1timeschool.com এর মত অসংখ্য সাইট রয়েছে যা পড়াশোনার পাশাপাশি নানা রকম তথ্য দিয়ে থাকে। ইন্টারনেট যেন এক বিশ্ব জ্ঞান ভান্ডার। গুগলে কিছু জানতে চাইলেও এমন অসংখ্য সাইট পাওয়া যাবে। যেমন গুগলে গিয়ে, " সহজ পদ্ধতিতে ন্যারেশন" লিখে সার্চ দিলে ন্যারেশন শিখার পদ্ধতি নিয়ে হাজির হবে অসংখ্য সাইট।
- ৪. গল্প আর উপন্যাসের বই পড়তে যেন এক অন্য রকম মজা। সকলের বাড়িতেই এসকল বই রয়েছে। যখন মন চাই শুরু করুন বই পড়া, সেটা হোক পাঠ্যবই বা গল্প-উপন্যাস। যা ইচ্ছা পড়ুন তাতেই কাজ হবে।
- ৫. আমরা ছুটির দিনি গুলোতে কবিতা, উপন্যাস সহ নানারকম গল্প লিখার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি, এগুলো মিস্তিষ্কের অচল অংশ সচল করে তোলে। মন ভালো রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিশোর বয়সেই আনন্দ করতে করতে লিখে ফেললেন, " আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি, নাচিবো ঘুরি ঘুরি, গাহিব গান।" কি মজা তাই না। সৃষ্টি করুন আর আনন্দ করুন।
- ৬. প্রতিদিন কমপক্ষে এক বার হলেও চ্যটিং ম্যাসেজিং বা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় পড়ার কথা তুলুন। আপনি পড়ছেন না একথা বললেও পড়া নিয়ে বলা হয়, সমস্যা নেই। দেখবেন এর মাধ্যমে পড়ার আগ্রহ তৈরী হবে।
- ৭. সংবাদ পত্র পড়া অনেকেরি অভ্যাস আছে, এটি খুব ভালো অভ্যাস। পত্রিকায় নানা তথ্য পাওয়া যায়। ইটস এ স্টোর হাউজ অব নলেজ। এতে শিক্ষা পাতায় নানা রকম তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া ইন্টেরনেটেও অনেক সংবাদ পত্র সাইট রয়েছে, https://prothomalo.com, https://kalerkantho.com, https://www.dailynayadiganta.com সাইটগুলো অনলাইন সংবাদ পত্রের মধ্যে অন্যতম।
- ৮. দিন বা রাতে যে কোন নির্দৃষ্ট সময় বেছে নিন। সেটা এক বা দুই সময়ো হতে পারে। পাঠ্য বই এ সময় পড়া যেতে পারে। আর পড়ার চর্চা টি ধরে রাখার জন্যেও সময় নির্বাচন করা খুবি জরুরী।
- ৯. ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে। এটাও কিন্তু এক ধরনের পড়া। এর নাম প্রাকৃতি থেকে পড়া। ভ্রমনের ফলে আমাদের মন চাঙ্গা হওয়ার পাশাপাশি অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন হয়।
- ১০. মজার মজার রান্না করতে চেষ্টা করুন। হাস-মূরগী পালন করুন, বাগান গড়ে তুলুন। প্রতিটি বিষয়ের হিসাব রাখুন এবং এগুলো করে কিকি অভিজ্ঞতা হল তা লিখে রাখুন। যেমন মুরগি দিনে কয়টি ডিম দিয়েছে, বাগানের গোলাপ গাছটি ৫ দিনে কত সে.মি বেড়ে উঠেছে ইত্যাদি। এছাড়া না না রকম হাতের কাজ করুন, এই সময়ে কম্পিউটারে এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, একসিস, পাওয়ার পয়েনট সহ নানা রকম প্রগ্রামিং এর কাজ শিখুন। যা মজার পাশাপাশি জ্ঞানার্জনে সহযোগীতা করবে। প্রতিদিন ডায়েরী লেখার অভ্যাস করুন।
ছুটির দিনে বাড়িতে আরো অসংখ্য ভাবে পড়া যেতে পারে। এগুলো যার যার কোয়ালিটি আর বুদ্ধির উপর নির্ভরশীল। আপনি শুরু করুন। সেটা ভুল দিয়ে হলেও। কারন যে শুরু করে সে শেষ করে, কিন্তু যে শুরু করে না সে কখনো-ই শেষ করতে পারে না।
যার যার অভিজ্ঞতা কে কাজে লাগানোর উপযুক্ত সময় ছুটির দিন গুলো। বর্তমান যুগ কম্পিটিশনের যুগ। আর বিশ্ব আজ একক পাঠশালা। নিজের মত করে আনন্দ করুন আর বিশ্ব থেকে জ্ঞান নিন। পড়ুন, আনন্দের সাথে, আনন্দের মাধ্যমে। এগুলো আপনাকে বাস্তব জীবনে প্রথম না করুক অন্তত লাস্ট বেঞ্চের বাসিন্দা করবেনা!
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon