আম গাছের ফুল ও গুটি ঝরা রোধে ঔষুধ ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
এখানে যা থাকছে---
- আম গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- আম গাছে ঔষুধ স্প্রে করার নিয়ম
- আম গাছের ফুল ফল ঝরা রোধে করণীয়
- আমের গুটি ঝরা কমাতে হরমোন
আমের গুটি ঝরা রোধে স্প্রে |
আম একটি জনপ্রিয় ফল। বাণিজ্যিক ভাবে আম চাষের মাধ্যমে আর্থিক উন্নয়ন সম্ভব আত্মকর্মসংস্থান হিসেবে আম চাষ একটি লাভজনক উপায়। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় বর্তমানে নানা জাতের নানা স্বাদের নানা রং এর আম পাওয়া যায়। সারা বছর আম ফল জগতে রাজত্ব করে চলে। প্রচুর চাহিদা থাকায় আম চাষে আধুনিকায়ন ও আম চাষ পরিকল্পনার মাধ্যমে অধিক লাভ করা সম্ভব। আম চাষে অধিক মুনাফার্জনে প্রয়োজন আম গাছের সঠিক পরিচর্যা। আম গাছের প্রধান অন্তরায় আম গাছের রোগ বালাই ও ক্ষতিকারক পোকামাকড়। সঠিক সময়ে রোগ বালাই ও পোকামাকড় দমন করতে না পারলে আম চাষে ভালো মুনাফার্জন সম্ভব নয়। আমাদের আজকের আলোচনা আম গাছে ঔষুধ প্রয়োগের নিয়ম ও সার ব্যবস্থা নিয়ে।
আম গাছে মুকুল বা ফুল না আসার কারণঃ
বিভিন্ন কারণে আম গাছে নির্ধারিত সময়ে মুকুল নাও আসতে পারে। সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ না করলে আম গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে ফলে আম গাছে ফুল বা মুকুল আসে না। বর্ষা মৌসুমে আম গাছের গোড়ায় দীর্ঘ দীন জলাবদ্ধতা দেখা দিলে শিকড় পচে যায় ফলে গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে এবং ফুল আসে না। ছায়া যুক্ত স্থানে সূর্যালোক কম পড়ায় আম গাছ সঠিক মাত্রায় খাদ্য তৈরী করতে পারে না ফলে গাছে ফুল আসে না। এছাড়া ফুল আসার কয়েক মাস আগে থেকে বর্ষার কারণে বা ছায়া যুক্ত হওয়ায় আম গাছের গোড়ার মাটি নরম থাকলে শিকড় পচে যায় ফলে গাছ খাদ্য সবরাহ করতে ব্যর্থ হয়ে ফুল ফল ধরার পরিবেশ তৈরী করতে পারে না ফলে আম গাছে ফুল আসে না।
আম গাছে সার প্রয়োগের মাত্রা ও সময়ঃ
আম পাতা |
সঠিক বয়সে সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ ছাড়া আম গাছ থেকে ভালো ফলন আশাকরা যায় না। সাধারণত মাঘ থেকে ফাল্গুন মাসে আম গাছে মুকুল আসে। নির্ধারিত সময়ে মুকুল আসতে প্রয়োজন আম গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবস্থাপনা। আম গাছে ভালো ফলন পেতে বছরে ৩ বার সার প্রয়োগ করা উচিত। আম গাছে সার প্রয়োগের সময়কে তাই নিম্নোক্ত ৩ কিস্তিতে ভাগ করা যেতে পারে-
- ১. আম গাছে সার প্রয়োগের ১ম কিস্তি - সেপ্টেম্বর
- ২. আম গাছে সার প্রয়োগের ২য় কিস্তি - মার্চ
- ৩. আম গাছে সার প্রয়োগের ৩য় কিস্তি - মে
নিম্নে ৩ কিস্তিতে আম গাছে সার প্রয়োগের মাত্রা চার্ট বা ছক আকারে তুলে ধরা হলো।
১ম কিস্তিতে সার প্রয়োগের নিয়ম
আম গাছে সার প্রয়োগের সময়: সেপ্টেম্বর
সার প্রয়োগের সময় আম গাছের অবস্থা: ফল-ফুল বিহীন অবস্থা
- আম গাছের বয়স: ১-৪ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ২৫ কেজি
ইউরিয়া: ২৫০ গ্রাম
টিএসপি: ৪৫০ গ্রাম
এমওপি: ১০০ গ্রাম
জিপসাম: ২০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ২০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৩০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৫-৭ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৩৫ কেজি
ইউরিয়া: ৫০০ গ্রাম
টিএসপি: ৫০০ গ্রাম
এমওপি: ২০০ গ্রাম
জিপসাম: ৪০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ২০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৩০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৮-১০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৪৫ কেজি
ইউরিয়া: ৭০০ গ্রাম
টিএসপি: ৯০০ গ্রাম
এমওপি: ২৫০ গ্রাম
জিপসাম: ৫০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ৩০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৫০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১১-১৫ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৫৫ কেজি
ইউরিয়া: ৯৫০ গ্রাম
টিএসপি: ১ কেজি
এমওপি: ৩৫০ গ্রাম
জিপসাম: ৬০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ৩০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৫০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১৬-২০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৭০ কেজি
ইউরিয়া: ১ কেজি ৩০০ গ্রাম
টিএসপি: ১ কেজি ২০০ গ্রাম
এমওপি: ৪৫০ গ্রাম
জিপসাম: ৭০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ৪০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৭০ justify
- আম গাছের বয়স: ২১ বছর এর ঊর্ধ্বে হলে
গোবর সার: ৮০ কেজি
ইউরিয়া: ১ কেজি ৮০০ গ্রাম
টিএসপি: ১ কেজি ৮০০ গ্রাম
এমওপি: ৭০০ গ্রাম
জিপসাম: ৮০০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ৪০ গ্রাম
বরিক এসিড: ৮০ গ্রাম
২য় কিস্তিতে সার প্রয়োগের নিয়ম
আম গাছে সার প্রয়োগের সময়: মার্চ এর মাঝামাঝি
সার প্রয়োগের সময় আম গাছের অবস্থা: ফল মটর দানার মত হলে
- আম গাছের বয়স: ১-৪ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ১৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৫-৭ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৩৫ কেজি
ইউরিয়া: ২৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ১০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৮-১০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৪৫ কেজি
ইউরিয়া: ৩৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ১৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১১-১৫ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ৫০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ কেজি
এমওপি: ২০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১৬-২০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ৭০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ২৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ২১ বছর এর ঊর্ধ্বে হলে
গোবর সার: ৮০ কেজি
ইউরিয়া: ৯০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ৪০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
৩য় কিস্তিতে সার প্রয়োগের নিয়ম
আম গাছে সার প্রয়োগের সময়: মে এর মাঝামাঝি
সার প্রয়োগের সময় আম গাছের অবস্থা: ফল-ফুল বিহীন অবস্থা
- আম গাছের বয়স: ১-৪ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ১৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৫-৭ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৩৫ কেজি
ইউরিয়া: ২৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ১০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ৮-১০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ৪৫ কেজি
ইউরিয়া: ৩৫০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ১৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১১-১৫ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ৫০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ কেজি
এমওপি: ২০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ১৬-২০ বছর বয়সের গাছ হলে
গোবর সার: ০ কেজি
ইউরিয়া: ৭০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ২৫০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
- আম গাছের বয়স: ২১ বছর এর ঊর্ধ্বে হলে
গোবর সার: ৮০ কেজি
ইউরিয়া: ৯০০ গ্রাম
টিএসপি: ০ গ্রাম
এমওপি: ৪০০ গ্রাম
জিপসাম: ০ গ্রাম
জিংক সালফেট: ০ গ্রাম
বরিক এসিড: ০ গ্রাম
আম গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
পাকা সুস্বাদু আম |
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আম গাছে সার প্রয়োগের মাত্রা বাড়াতে হয়। উপরের চার্টে গাছের বয়স ও সময় অনুযায়ী সার প্রয়োগের মাত্রা তুলে ধরা হয়েছে। ইউরিয়া এবং এমপিও সার ৩ কিস্তিতেই নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে ইউরিয়া ও এমপিও সার বাদে অন্য সকল সার শুধু মাত্র ১ম কিস্তিতে বছরে একবার প্রয়োগ করলেই হবে। সার সাধারণত গাছের গোড়া থেকে ১ থেকে ১.৫ সেমি দূরে প্রয়োগ করতে হয়। তবে গাছের বয়স বেশি হলে দূরত্ব আরো বেশি রেখে সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রথমে আম গাছের গোড়ার চারিদিকে সমান দূরত্ব রেখে কুপিয়ে নিতে হবে। কোপানো মাটিতে সার ছিটিয়ে পুনরায় আরেকবার মাটি কুপিয়ে সার মাটির নিচে তলিয়ে দিতে হবে। প্রতিবার সার প্রয়োগের পর আম বাগানে অথবা গাছের গোড়ায় হালকা সেচ দিতে হবে যাতে সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশে যায়।
আম গাছের ফুল ও ফল ঝরা রোধে ঔষুধ ও করণীয়ঃ
সঠিক সার প্রয়োগ ও পরিচর্যার মাধ্যমে আম গাছ থেকে প্রচুর ফুল ও ফল পাওয়া যায়। আম গাছের ফুল ঝরা রোধ ও বেশি ফল উৎপন্ন করতে ফল ঝরা রোধ ও দ্রুত ফোল বড় করার আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আম গাছের ফুল ও ফল ঝরা রোধে নিম্নোক্ত হরমন, ঔষুধ ও পরিচর্যা গ্রহণ করা যেতে পারে-
- ১. আম গাছের পাউডারি মিলডিউ রোধে আম গাছে মুকুল আসার ৭-১০ দিন আগে অর্থাৎ মাঘ-ফাল্গুন মাসে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন, থিওভিট/ম্যাকসালফার/রনভিট ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে আম গাছ ভালো ভাবে স্প্রে করে দিতে হবে। ছত্রাকনাশক স্প্রে করার সময় আম গাছের দূর্বলতা রোধে ভিটামিন জাতীয় ঔষুধ যেমন, ফ্লোরা এবং হরমন জাতীয় ঔষুধ যেমন, লিটোসিন বা ভক্সাল সুপার নির্ধারিত মাত্রায় একসাথে মিশিয়ে স্প্রে করা যেতে পারে। এই সময় ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও বিছাপোকা রোধে যে কোনা গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। পাউডারি মিলডিউ রোধের মাধ্যমে আম গাছের ফুল ফল ঝরা রোধ করা অনেকাংশে সম্ভব হয়।
- ২. আমের মুকুল বের হবার এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ মুকুলের দৈর্ঘ্য ১-১.৫ ইঞ্চি হলে বা মুকুলের ফুল ফোটার ঠিক আগে আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (Imidacloprid) -৭০ ডব্লিউ জি গ্রুপের কীটনাশক যেমন, ইমিটাফ/কনফিড/টিডো ইত্যাদি প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে ভালো ভাবে স্প্রে করে আম গাছের পাতা, মুকুল ও কান্ডে প্রয়োগ করতে হবে অথবা, ইমিডাক্লোপ্রিড -৭০ এর পরিবর্তে সাইপারমেথ্রিন (Cypermethrin) ১০ ইসি গ্রুপের কীটনাশক যেমন, কট/রিপ কর্ড/রেলোথ্রিন প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে প্রয়োগ করা যেতে পারে। কীটনাশক প্রয়োগের সময় আম গাছের ছত্রাক রোধের জন্য ম্যানকোজেব (Mancozeb) এম-৪৫ গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন, ডাইথেন/ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে কীটনাশকের সাথে একসাথে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজনে এই সময় নাইট্রোবেনজিন ২০% ডব্লিউ গ্রুপের ভিটামিন যেমন, ফ্লোরা বা প্লানোফিক্স হরমোন যেমন, লিটোসেন মেশানো যেতে পারে যা আমের মুকুলকে পুষ্ট করে দ্রুত বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। এই সময় হফার দমন ও ছত্রাক দমনের মাধ্যমে আমের মুকুল নষ্ট হওয়া থেকে মুকুল কে রক্ষা করা সম্ভব হয়।
- ৩. আম গাছের সব মুকুলের সমস্ত ফুল ফুটে গেলে এই সময়ে প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে জিবেরেলিক এসিড স্প্রে করতে হবে যা আমের গুটি ঝরা রোধ করে আমের প্রতিটি বোটায় বা থলিতে আমের গুটির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। এই সময় জিবেরেলিক এসিডের সাথে এক সাথে বোরিক এসিড প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে যা আমের গুটি ঝরা রোধ করে আমের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক হিসাবে কাজ করবে।
- ৪. আমের গুটি মটর দানার আকার ধারণ করলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে আম গাছে স্প্রে করতে হবে অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে ২ মিলি হারে প্লানোফিক্স (Planofix) হরমোন যেমন, লিটোসেন মিশিয়ে আম গাছে স্প্রে করতে হবে। ইউরিয়া/হরমোন স্প্রে করার সময় আগের নিয়মেই ইমিডাক্লোপ্রিড/সাইপারমেথ্রিন গ্রুপের কীটনাশক এবং ম্যানকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক একসাথে মিশিয়ে আম গাছের পাতা, গুটি, শাখা ও কান্ডে ভালো করে স্প্রে করতে হবে। এই সময় অতিরিক্ত সহায়ক হিসাবে বোরিক এসিড ১০ লিটার পানিতে ৬ মিলি হারে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। হপার পোকার আক্রমণ বেশি হলে এবং ছত্রাক জনিত এথ্রাকনোজ রোগ এর লক্ষণ বেশি পরিলক্ষিত হলে ৭-১০ দিন পর পুনরায় একি নিয়মে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক আম গাছে স্প্রে করা যেতে পারে। এই সময় আম বাগানের মাটি শুষ্ক থাকলে আমের গুটি ঝরা রোধ কমাতে ইউরিয়া/হরমোন আম গাছে স্প্রে করার পাশাপাশি পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। মাটি ভিজা না থাকলে ১০-১৫ দিন পরপর সেচ দিয়ে যেতে হবে যা আমের গুটি ঝরা বহুলাংশে কমিয়ে দেবে।
- ৫. আমের গুটি মার্বেল আকার ধারণ করলে গুটি দ্রত বৃদ্ধি করতে এবং গুটি ঝরা কমাতে প্লানোফিক্স হরমোন বা ভিটামিন হিসেবে ফ্লোরা / ভক্সাল সুপার এর মতো ঔষুধ বা হরমোন প্রয়োগ করা যেতে পারে। এই সময়ে মশা বা পোকা দমনে প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- ৬. আম পরিপক্ব হলে মাছি পোকার আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করতে পলেথিন দিয়ে আম মুড়িয়ে অথবা আমের থলি ঢেকে দেওয়া যেতে পারে সেই সাথে মাছি পোকার হরমোন ফাদ আম বাগানে রেখে মাছি পোকা দমন করা যেতে পারে।
উপরোক্ত নিয়মে পরিচর্যা করলে সুস্থ সবল আমগাছ পাওয়ার সাথে সাথে অধিক ফুল ফল সমৃদ্ধ আম গাছ পাওয়া যাবে। ফুল ফল ঝরা রোধ করে প্রতিটি আম গাছ থেকে পাওয়া যাবে আশানুরূপ ফল। অধিক মুনাফার্জনে তাই আধুনিক পদ্ধতিতে আম চাষের কোনো বিকল্প নেই।
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon