খতিয়ান করার আধুনিক নিয়ম - চলমান জের ছক পদ্ধতি
এখানে যা থাকছে---
- খতিয়ানের চলমান জের ছক পদ্ধতি
- সহজ পদ্ধতিতে চলমান জের ছকে খতিয়ান
- আধুনিক পদ্ধতিতে খতিয়ান করার নিয়ম
- চলমান জের ছক পদ্ধতিতে খতিয়ান
খতিয়ানের চলমান জের পদ্ধতি |
খতিয়ান কিঃ
জাবেদার পরি খতিয়ানের অবস্থান। Ledger শব্দের অর্থ খতিয়ান বা তাক। একি শ্রেণীর হিসাব একসাথে সংরক্ষন করার পদ্ধতিই হল খতিয়ান। জাবেদা বই থেকে একি ধরনের হিসাব সমূহ এক সাথে খতিয়ান বই এ লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তাকে পোশাক বা বই সুন্দর করে আলাদা আলাদা করে খতিয়ানে হিসাব সমূহ সংরক্ষন করে রাখা হয় বলে খতিয়ান কে লেজার বা তাক বলে।
খতিয়ানের চলমান জের ছক পদ্ধতি বলতে কি বোঝায়ঃ
হিসাববিজ্ঞানে খতিয়ান করার যে গুলো পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে তার মাঝে আধুনিক পদ্ধতি হলো খতিয়ানের চলমান জের ছক পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে খতিয়ান বই এ হিসাব লিপিবদ্ধের সাথে সাথে প্রতি লাইনে যোগ বা বিয়োগ করে ফলাফল বা জের বের করে ফেলা হয় বলে খতিয়ানের আধুনিক এই পদ্ধতিকে খতিয়ানের চলমান জের ছক পদ্ধতি বলে।
খতিয়ানের চলমান জের ছক পদ্ধতিতে ছকের অংশ সমূহঃ
চলমান জের ছক - খতিয়ান |
খতিয়ানের আধুনিক পদ্ধতি বা আমারিকান পদ্ধতি বা চলমান জের ছক পদ্ধতিতে খতিয়ানে হিসাব লিপিবদ্ধ করতে হলে ছকে নিম্নোক্ত ঘর গুলো অবশ্যই কাটতে হবে-
- ১. তারিখের ঘর
- ২. বিবরণের ঘর
- ৩. জাবেদা পৃষ্ঠার ঘর
- ৪. ডেবিট টাকার ঘর
- ৫. ক্রেডিট টাকার ঘর
- ৬. ব্যালেন্স বা জের বা উদৃত্ত এর ঘর
- ৬.১. ডেবিট ব্যালান্সে এর ঘর
- ৬.২. ক্রেডিট ব্যালান্স এর ঘর
ব্যালেন্স বা জের এর অংশ সমূহঃ
চলমান জের ছক পদ্ধতিতে ছকের একেবারে ডান দিকে ব্যালেন্স বা জেরের ঘর কাটতে হয়। ব্যালেন্স বা জেরের ঘরের দুটি অংশ থাকে, যথা-
- ১. ডেবিট জের এর ঘর
- ২. ক্রেডিট জের এর ঘর
জাবেদার ও খতিয়ানের সম্পর্ক ও বৈপরীত্যঃ
জাবেদার সাথে খতিয়ানের কিছু সম্পর্ক ও পার্থক্য রয়েছে, যথা-
- ১. জাবেদা করার পর একি ধরনের হিসাব নিয়ে খতিয়ান করতে হয় তাই প্রশ্নে জাবেদা করতে না বললেও মনে মনে জাবেদা করে নিয়ে তার পর খতিয়ান করতে হয়।
- ২. যে হিসাবের খতিয়ান করা হবে জাবেদা করার পর সেই হিসাব ডেবিট থাকলে চলমান জের ছকের ডেবিট টাকার ঘরে ডেবিট টাকার পরিমাণ লিখতে হয় এবং আগের লাইনের জেরের সাথে যোগ অথবা বিয়োগ করে ব্যালান্স এর ডেবিট অথবা ক্রেডিট ঘরে টাকা লিখতে হয় কিন্তু বিবরণের ঘরে জাবেদায় ডেবিট হিসাবের নাম না লিখে ক্রেডিট হিসাবের নাম লিখতে হয়। অর্থাৎ টাকা যদি ডেবিটের হয় তবে ডেবিট কিন্তু বিবরণের ঘরে ক্রেডিট হিসাবের নাম লিখতে হয়।
- ৩. যে হিসাবের খতিয়ান করা হবে জাবেদা করার পর সেই হিসাব ক্রেডিট থাকলে চলমান জের ছকের ক্রেডিট টাকার ঘরে ক্রেডিট টাকার পরিমাণ লিখতে হয় এবং আগের লাইনের জেরের সাথে যোগ অথবা বিয়োগ করে ব্যালান্স এর ডেবিট অথবা ক্রেডিট ঘরে টাকা লিখতে হয় কিন্তু বিবরণের ঘরে জাবেদায় ক্রেডিট হিসাবের নাম না লিখে ডেবিট হিসাবের নাম লিখতে হয়। অর্থাৎ টাকা যদি ক্রেডিটের হয় তবে ক্রেডিট কিন্তু বিবরণের ঘরে ডেবিট হিসাবের নাম লিখতে হয়।
- ৪. জাবেদার পর খতিয়ান করা হয় তাই জাবেদা বই এ খতিয়ান পৃষ্ঠার ঘর এবং খতিয়ান বই এ জাবেদা পৃষ্ঠার ঘর কাটতে হয়।
খতিয়ানের চলমান জের ছকে হিসাব লিপিবদ্ধের নিয়মঃ
খতিয়ানের আধুনিক বা এমেরিকান বা চলমান জের ছক পদ্ধতিতে জাবেদা বই হতে খতিয়ান বই এ হিসাব লিপিবদ্ধ করতে গেলে যে সকল নিয়ম অনুসরণ করতে হয় তা নিম্নরূপ-
- ১. যে হিসাবের খতিয়ান করতে হবে সেই হিসাব আছে এমন জাবেদা গুলো প্রথমে খুজে বের করতে হবে।
- ২. খতিয়ানের চলমান জের ছকে প্রতিটি এন্ট্রি লিখার সময় আগে ডেবিট অথবা ক্রেডিট টাকার ঘর পূর্ন করতে হবে এর পর আগের ঘরের জের বা ব্যালেন্স এর টাকার সাথে এই টাকা যোগ অথবা বিয়োগ করে জের বা ব্যালেন্স এর ডেবিট অথবা ক্রেডিট ব্যালেন্স বা জেরের টাকার ঘরে বসাতে হবে।
- ৩. সবসময় এটা মনে রাখতে হবে যে প্রতিটি হিসাব চলমান জের ছকে লিপিবদ্ধ করার সাথে সাথে ২ স্থানে টাকা বসাতেই হবে। অর্থাৎ প্রথমে ডেবিট টাকা অথবা ক্রেডিট টাকার ঘরে এর পর আগের লাইনের ব্যালেন্স বা জেরের টাকার সাথে এই টাকা যোগ বিয়োগ করে ব্যালেন্স এর ডেবিট টাকা অথবা ক্রেডিট টাকার ঘরে বসাতে হবে।
- ৪. প্রতি হিসাব লিপিবদ্ধ করার সময় টাকার দুই ঘর পূর্ণ করার পর বিবরণের ঘরে যে হিসাবের ঘতিয়ান করা হচ্ছে তার বীপরিত হিসাবের নাম লিখতে হবে এবং এর পর তারিখের ঘর পূর্ণ করতে হবে এতে বুঝতে সহজ ও ভুল থাকার সম্ভাবনা কম হবে।
- ৫. যে হিসাবের খতিয়ান করা হচ্ছে, জাবেদায় সেই হিসাব ডেবিট হলে খতিয়ানের চলমান জের ছকের ডেবিট টাকার ঘরে টাকার পরিমাণ লিখতে হবে এবং ব্যালেন্স টাকার ঘরে আগের লাইনের ব্যালেন্স বা জের ডেবিট থাকলে যোগ করে ডেবিট ব্যালেন্স বা জেরের ঘরে আর আগের লাইনের জের বা ব্যালেন্স ক্রেডিট থাকলে বিয়োগক করে বিয়োগ করার সময় ডেবিট না ক্রেডিটের টাকা বড় ছিল সেটা দেখে ডেবিট ব্যালেন্স অথবা ক্রেডিট ব্যালেন্স এর ঘরে টাকা বসাতে হবে।
- ৬. যে হিসাবের খতিয়ান করা হচ্ছে, জাবেদায় সেই হিসাব ক্রেডিট হলে খতিয়ানের চলমান জের ছকের ক্রেডিট টাকার ঘরে টাকার পরিমাণ লিখতে হবে এবং আগের লাইনের জের বা ব্যালেন্স ক্রেডিট থাকলে যোগ করে ক্রেডিট ব্যালেন্স বা জেরের ঘরে বসাতে হবে। কিন্তু আগের লাইনের জের ডেবিট থাকলে বিয়োগ করতে হবে এবং বিয়োগ করার সময় ডেবিট না ক্রেডিটের টাকা বড় ছিল সেটা দেখে ডেবিট জের বা ব্যালেন্স অথবা ক্রেডিট জের বা ব্যালেন্সের ঘরে টাকা বসাতে হবে।
চলমান জের ছকে টাকা বসানোর নিয়মঃ
চলমান জের ছকে টাকা বসাতে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। প্রতিটি হিসাব খতিয়ানের চলমান জের ছকে লিপিবদ্ধের সাথে সাথে ২ টি টাকার ঘর পূর্ণ করতে হয়। টাকার ঘর পূর্ণ করার নিয়ম নিম্নরূপ-
- ১. প্রতি লাইন করার সময় ডেবিট টাকা বসানোর পর এই ডেবিট টাকার সাথে আগের লাইনের ডেবিট জের বা ব্যালেন্স যোগ হয়ে নতুন ভাবে ডেবিট জেরের বা ডেবিট ব্যালেন্স এর ঘরে টাকা বসাতে হবে।
- ২. প্রতি লাইন করার সময় ক্রেডিট টাকা বসানোর পর এই ক্রেডিট টাকার সাথে আগের লাইনের ক্রেডিট জের বা ব্যালেন্স যোগ হয়ে নতুন ভাবে ক্রেডিট জেরের বা ক্রেডিট ব্যালেন্স এর ঘরে টাকা বসাতে হবে।
- ৩. প্রতি লাইন করার সময় ডেবিট টাকা বসানোর পর আগের লাইনের জের বা ব্যালেন্স ডেবিট না হয়ে ক্রেডিট হলে বিয়োগ করে নিতে হবে, বিয়োগ করার পর ব্যালেন্স বা জেরের ঘরে টাকা বসানোর আগে দেখে নিতে হবে যে, যে দুটি টাকা বিয়োগ করা হলো তার ডেবিটের টাকা বড় ছিল না ক্রেডিটের টাকা বড় ছিল, ডেবিটের টাকা বড় থাকলে ডেবিট ব্যালেন্স বা ডেবিট জেরের ঘরে টাকা বসাতে হবে এবং ক্রেডিটের টাকা বড় থাকলে ক্রেডিট ব্যালেন্স বা ক্রেডিট জেরের ঘরে টাকা বসাতে হবে।
- ৪. প্রতি লাইন করার সময় ক্রেডিট টাকা বসানোর পর আগের লাইনের জের বা ব্যালেন্স ক্রেডিট না হয়ে ডেবিট হলে বিয়োগ করে নিতে হবে, বিয়োগ করার পর ব্যালেন্স বা জেরের ঘরে টাকা বসানোর আগে দেখে নিতে হবে যে, যে দুটি টাকা বিয়োগ করা হলো তার ডেবিটের টাকা বড় ছিল নাকি ক্রেডিটের টাকা বড় ছিল। ডেবিটের টাকা বড় থাকলে ডেবিট ব্যালেন্স বা ডেবিট জেরের ঘরে টাকা বসাতে হবে এবং ক্রেডিটের টাকা বড় থাকলে ক্রেডিট ব্যালেন্স বা ক্রেডিট জেরের ঘরে টাকা বসাতে হবে।
- ৫. সহজে এটা মনে রাখা যেতে পারে যে ডেবিটে ও ডেবিটে যোগ হয়ে ডেবিট ব্যালেন্স এর ঘরে টাকা বসে।
- ৬. সহজে এটা মনে রাখা যেতে পারে যে ক্রেডিটে ও ক্রেডিটে যোগ হয়ে ক্রেডিট ব্যালেন্স এর ঘরে টাকা বসে।
- ৭. সহজে এটা মনে রাখা যেতে পারে যে ডেবিটে ও ক্রেডিটে বিয়োগ হয় এবং বিয়োগ করার সময় ডেবিটের টাকা বড় হলে ডেবিটের ব্যালেন্সের ঘরে এবং ক্রেডিটের টাকা বড় হলে ক্রেডিটের ব্যালেন্সের ঘরে টাকা বসে।
- ৮. সহজে এটা মনে রাখা যেতে পারে যে সমান সমান ঘরের টাকায় যোগ আর অসমান ঘরের টাকায় বিয়োগ হয়।
চলমান জের ছকে খতিয়ান - উদাহরণ ও ব্যখ্যাঃ
প্রশ্নে শুধু নগদান হিসাবের চলমান জের ছক পদ্ধতিতে খতিয়ান করতে বলা হয়েছে তাই যেসকল জাবেদায় নগদান হিসাব আছে শুধুমাত্র সেই সকল জাবেদা নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য বেছে নিতে হবে। ৩ ও ২৫ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব নেই বলে ৩ ও ২৫ তারিখের জাবেদা নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য প্রয়োজন হবে না। নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য ১, ২, ৫, ৬ এবং ৩০ তারিখের জাবেদা বেছে নিতে হবে।
নিম্নে ধাপে ধাপে চিত্র সহকারে নগদান হিসাবের খতিয়ান ব্যাখ্যা সহ চলমান জের ছকে দেখানো হলো-
- প্রথম ধাপ চিত্র-১
চিত্র-১ চলমান জের |
- ২য় ধাপ-চিত্র-২
চিত্র-২ চলমান জের |
- ৩য় ধাপ- চিত্র-৩
চিত্র-৩ চলমান জের |
- ৪র্থ-ধাপ চিত্র-৪
চিত্র-৪ চলমান জের |
- ৫ম-ধাপ চিত্র-৫
চিত্র-৫ চলমান জের |
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon