২ এর পরিপূরক নির্ণয়ের সূত্র ও গুরুত্ব
এখানে যা থাকছে---
- ২ এর পরিপূরক নির্ণয়ের সূত্র
- ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ
- ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ
- 2's Complement নির্ণয়ের সূত্র
- ২ এর পরিপূরকের গুরুত্ব
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ বিয়োগ |
পরিপূরক সম্পর্কে জানার আগে যা জানা প্রয়োজনঃ
- চিহ্নযুক্ত সংখ্যা ও চিহ্নবিহীন সংখ্যা কি- আমরা কোনো সংখ্যাকে যখন যোগ চিহ্ন (+) বা বিয়োগ চিহ্ন (-) ছাড়া প্রকাশ করি বা লিখি তখন তাকে চিহ্নবিহীন সংখ্যা বলে, যেমন- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ইত্যাদি। কিন্তু যখন কোনো সংখ্যাকে যোগ অথবা বিয়োগ চিহ্ন সহকারে লেখা হয় বা প্রকাশ করা হয় তখন তাকে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা বলে যেমন- +১, +২, +৩, -১, -২, -৩, -৪ ইত্যাদি।
- ডিজিটাল যন্ত্রে তথ্যের আকার- ডিজিটাল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশে সমস্ত তথ্য কোড আকারে থাকে। বর্তমানে জনপ্রিয় প্রায় সকল ডিজিটাল যন্ত্রে বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এসকল যন্ত্রে যে কোনো তথ্য যেমন কোনো অক্ষর, চিহ্ন বা লেখা, ছবি বা ভিডিও সহ সমস্ত কিছু কোড আকারে থাকে। আমরা মোবাইলে কিছু লিখলে মোবাইলের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়া ইউনিট সেসব লেখা বোঝেনা বরং সে সব লেখা কে বাইনারি পদ্ধতিতে কোড করে তার পরে বোঝে। মোবাইলে ছবি তুললে সে সকল ছবি কোড আকারে থাকে, শুধুমাত্র ছবি ভিউ করার সময় সে সকল ছবির কোড কে মোবাইল ছবি আকারে তার ডিসপ্লে তে দেখিয়ে থাকে। এক কথায় কোনো ডিজিটাল যন্ত্রের সমস্ত তথ্য বাইনারি কোড আকারে থাকে এবং ডিজিটাল যন্ত্র বাইনারি কোড ছাড়া অন্য কোনো ভাষা, অক্ষর প্রতিক বা চিহ্ন বোঝে না। অর্থাৎ A, B, C, D বা ক, খ, গ বা ১, ২, ৩ বা +, -, ÷ এসব কিছুই মোবাইল বা কম্পিউটার বোঝেনা বরং এসকল অক্ষর, বর্ণ, প্রতীক, বা সংখ্যা কে বাইনারি সংখ্যা 0 এবং 1 এ দুই ডিজিটে কোড আকারে প্রকাশ করে বুঝে থাকে।
- কোড কি- তত্য উপাত্ত সংক্ষিপ্ত অথবা গোপনে প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত সংকেত বা পদ্ধতিকে কোড বলে। যেমন আমি=1, তোমাকে=0, ভালোবাসি=10 ধরে, কোথাও 1010 লিখলে "আমি তোমাকে ভালোবাসি" প্রকাশ পাবে এভাবে কোনো কিছু সংক্ষিপ্ত ও গোপন ভাবে প্রকাশ করতে যে সকল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তাকে কোড বলে।
- বিট কি- বাইনারি সংখ্যায় ব্যবহার করা 0 এবং 1 এর প্রতিটি অক্ষর বা সংখ্যা কে এক একটি বিট বলে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় 1001 এই বাইনারি সংখ্যা বা কোড টি চারটি বিট বা অক্ষর দ্বারা গঠিত একটি সংখ্যা বা কোড।
- রেজিষ্টার কি- কোনো ডিজিটাল যন্ত্রে বাইনারি সংখ্যা দ্বারা তথ্য উপাত্ত কে প্রকাশ ও সংরক্ষন স প্রক্রিয়া করতে যে জায়গা বা মেমরি ব্যবহার করা হয় তাকে রেজিষ্টার বলে। বর্তমানে ডিজিটাল যন্ত্রে সাধারন্ত ৮ বিট, ১৬ বিট, ৩২ বিট, ৬৪ বিট রেজিষ্টার বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ৮ বিট রেজিষ্টারে কোনো অক্ষর, প্রতীক বা চিহ্ন প্রকাশ করতে বাইনারি ৮ টি ডিজিট বা অক্ষর ব্যবহার করা হয়। এভাবে ৬৪ বিট রেজিষ্টারে প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয় ৬৪ টি বাইনারি ডিজিট বা অক্ষর। অর্থাৎ ৮ বিট রেজিষ্টারে ক' এর পরিবর্তে 00000001 লেখা হলে ১৬ বিট রেজিষ্টারে ক' এর পরিবর্তে 0000000000000001 লিখতে হবে।
পরিপূরক কাকে বলেঃ
আইসিটি (ICT) তে কোনো সংখ্যা প্রকাশের জন্য পরিপূরকের ভূমিকা অপরিসীম। ইংরেজি Complement শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ পূরক এবং Complementary অর্থ পরিপূরক। পরিপূরক বা পূরক অর্থ পূর্ণ করা বা একের পরিবর্তে অন্য কিছু দিয়ে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ কোনো অক্ষর, বর্ণ বা প্রতিক বা কোনো তথ্যের পরিবর্তে অন্য কোনো অক্ষর, বর্ণ বা প্রতিক ব্যবহার করাকে Complement বা পরিপূরক বলে। ICT তে চিহ্নযুক্ত সংখ্যা ডিজিটাল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশের বোধগম্য করে তুলতে চিহ্ন সহ কোনো সংখ্যাকে বা চিহ্নযুক্ত সংখ্যাকে বাইনারি কোড আকারে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে পরিপূরক পদ্ধতি বলে।
বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে যোগ ও বিয়োগ চিহ্নের প্রকাশঃ
ডিজিটাল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ কোনো প্রকার চিহ্ন, অক্ষর বা প্রতীক বোঝে না। বোঝে শুধুমাত্র বাইনারি ভাষা বা সংখ্যা। 0 এবং 1 এই দুটি সংখ্যা দ্বারা বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। সাধারন্ত প্লাস (+) চিহ্ন ডিজিটাল যন্ত্র বাইনারি 0 দ্বারা প্রকাশ করে থাকে এবং মাইনাস (-) চিহ্ন প্রকাশ করে থাকে 1 দ্বারা। তাই যে কোনো প্লাস বা যোগ চিহ্ন যুক্ত সংখ্যার কোড 0 দ্বারা শুরু হয় এং বিয়োগ চিহ্ন যুক্ত সংখ্যার কোড শুরু হয় 1 দ্বারা। কোনো সংখ্যার চিহ্ন বিট সেই সংখ্যার প্রকৃত বাইনারি মানের আগে অর্থাৎ সর্ব প্রথম বা বামে বসানো হয়। প্লাস এবং মাইনাসের পরিবর্তে কোনো সংখ্যার বাইনারি মানের পূর্বে প্লাস বোঝাতে 0 এবং মাইনাস বোঝাতে 1 অতিরিক্ত বিট হিসাবে চিহ্নের মান হিসেবে ব্যবহার করা হয় বলে একে সাইন বিট (Sign bit) বলে। ৩ একটি সংখ্যা যার প্রকৃত বাইনারি মান ১১ সুতারং +৩ এর বাইনারি রূপ হবে ০১১ যেখানে প্রথম ০ হলো sign bit, তবে -৩ প্রকাশের ক্ষেত্রে ১১১ না লিখে ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে প্রকাশ করতে হবে। নিম্নে ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে মাইনাস সংখ্যা প্রকাশের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত সহজ ভাবে তুলে ধরা হলো।
পরিপূরক নির্ণয়ের পদ্ধতি সমূহঃ
- ১. 1's Compliment বা ১ এর পরিপূরক
- ২. 2's Compliment বা ২ এর পরিপূরক
১ এর পরিপূরক কিঃ
পরিপূরক সাধারন্ত বিয়োগ চিহ্নযুক্ত সংখ্যার বাইনারি রূপ। যোগ চিহ্ন যুক্ত কোনো সংখ্যার বাইনারি রূপ কে বিপরীত ভাবে লিখলে অর্থাৎ 0 এর পরিবর্তে 1 এবং 1 এর পরিবর্তে 0 লিখলে যে বাইনারি রূপ পাওয়া যায় তাকে ১ এর পরিপূরক বা 1's Complement বলে। যেমন ৩ এর প্রকৃত বাইনারি মান 11, যদি ৮ বিট রেজিষ্টারে +৩ এর মান লিখি তবে দাঁড়াবে 00000011, এখানে সর্ব বামের 0 বিট টি + চিহ্নের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাকি 0 গুলো ৮ বিট রেজিষ্টারে ৮ বিট বা মোট ৮ টি সংখ্যা বানাতে ব্যবহার করা হয়েছে, ১৬ বিট বা তার চেয়ে বেশি বিটের রেজিষ্টারের জন্য আরো বেশি 0 ব্যবহার করার প্রয়োজন হত। এখন 00000011 সংখ্যাটিকে 1's complement বা -৩ এর ১ এর পরিপূরক করলে দাঁড়াবে 11111100, এখানে প্রতিটি 0 এর পরিবর্তে 1 এবং প্রতিটি 1 এর পরিবর্তে 0 লেখা হয়েছে এবং সর্ব বামের বা সর্ব প্রথম 1 টি মাইনাস বা বিয়োগ চিহ্নের পতীক বা সাইন বিট হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ কোনো + বা প্লাস চিহ্ন যুক্ত সংখ্যার বাইনারি রূপে 1 এর পরিবর্তে 0 এবং 0 এর পরিবর্তে 1 লিখে পরিবর্তন করলে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেই সংখ্যাটি ১ এর পরিপূরক এবং সংখ্যাটি মাইনাস বা - বা বিয়োগ চিহ্ন যুক্ত সংখ্যার বাইনারি রূপ।
১ এর পরিপূরক |
- ১. সংখ্যাটির প্রকৃত বাইনারি মান নির্ণয়।
- ২. ৮ বিট বা যে কোনো বিট সম্বলিত রেজিষ্টারে ঐ সংখ্যার যোগ চিহ্ন সম্বলিত বাইনারি রূপ নির্ণয়।
- ৩. ০ এর পরিবর্তে 1 এবং 1 এর পরিবর্তে 0 বসিয়ে মাইনাস চিহ্ন সম্বলিত সংখ্যার ১ এর পরিপূরক নির্ণয়।
- ধাপ-১. 3 এর প্রকৃত মান = 11
- ধাপ-২. ৮ বিট রেজিষ্টারে +3 এর মান = 00000011
- ধাপ-৩. ৮ বিট রেজিষ্টারে -3 এর ১ এর পরিপূরক = 11111100
২ এর পরিপূরক নির্ণয়ের সূত্র ও পদ্ধতিঃ
২ এর পরিপূরক নির্ণয়ের সূত্র বা ২ এর পরিপূরক নির্ণয়ের পদ্ধতি খুবি সোজা। কোনো সংখ্যার 1's Complement বা ১ এর পরিপূরকের সাথে 1 যোগ করে যে সংখ্যা পাওয়া যায় সেটি ২ এর পরিপূরক বা 2's Complement.
২ এর পরিপূরক |
- ধাপ-১. 3 এর প্রকৃত মান = 11
- ধাপ-২. ৮ বিট রেজিষ্টারে +3 এর মান = 00000011
- ধাপ-৩. ৮ বিট রেজিষ্টারে -3 এর ১ এর পরিপূরক = 11111100
- ধাপ-৪. ৮ বিট রেজিষ্টারে -3 এর ২ এর পরিপূরক =(১ এর পরিপূরক + 1) বা, (11111100+1) বা 11111101
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ করার নিয়মঃ
এখন সরলে দেখা যায় যে +৪ ও -৩ পরিপূরক পদ্ধতিতে যোগ করতে +৪ এর বাইনারি মান হতে -৩ এর বাইনারি মান যোগ করলে তবে সংখ্যাদুটির যোগফল পাওয়া যাবে কারণ সরলে +৪ ও -৩ এর মাঝে আরেকটি + চিহ্ন রয়েছে।
দশমিক মান | বাইনারি মান |
+৪ | ০০০০০১০০ |
-৩ | ১১১১১১০১ |
+১ | ১০০০০০০০১(যোগ করে) |
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ করার নিয়মঃ
এখন সরলে দেখা যায় যে +৪ থেকে +৩ পরিপূরক পদ্ধতিতে বিয়োগ করতে +৪ এর বাইনারি মান হতে -৩ এর বাইনারি মান যোগ করলে তবে সংখ্যাদুটির বিয়োগফল পাওয়া যাবে কারণ সরলের উত্তরে +৪ ও -৩ এর মাঝে + চিহ্ন রয়েছে।
দশমিক মান | বাইনারি মান |
+৪ | ০০০০০১০০ |
-৩ | ১১১১১১০১ |
+১ | ১০০০০০০০১(যোগ করে) |
যেহেতু সরল অনুযায়ী +৪ ও -৩ এর যোগফলি হবে +৪ থেকে +৩ এর বিয়োগ ফল।
অতএব নির্ণেয় বিয়োগফল=০০০০০০০১।
২ এর পরিপূরকে যোগ ও বিয়োগের ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়ঃ
২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে দুইটি বা তারচেয়ে বেশি সংখ্যার মাঝে বাইনারি পদ্ধতিতে যোগ বা বিয়োগ করতে গেলে অনেক সময় ক্যারি বা হাতে থাকতে থাকতে এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যা রেজিষ্টারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। অর্থাৎ ৮ বিট রেজিষ্টারের ক্ষেত্রে যোগফল বা বিয়োগফল ৯ টি বিট, ১৬ বিট রেজিষ্টারের ক্ষেত্রে যোগফল বা বিয়োগফল ১৭ বিট হয়ে যায়। যেহেতু রেজিষ্টারের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বাড়তি বিট গ্রহণযোগ্য নয় তাই সর্ব প্রথমের বা সর্ব বামের বাড়তি বিট অর্থাৎ ক্যারি বিট বাদ দিয় ২ এর পরিপূরকের মাধ্যমে যোগ বা বিয়োগের মাণ নির্ণয় করতে হয়। অতিরিক্ত বিট বাদ দেওয়ার পর যে বাইনারি সংখ্যা থাকে তার সর্ব বামের বিট টি ০ হলে যোগফল বা বিয়োগফল + চিহ্ন সম্বলিত এবং বামের বিট টি ১ হলে যোগফল বা বিয়োগফল মাইনাস চিহ্ন সম্বলিত।
[সরলের উত্তরে দুটি সংখ্যা মাইনাস তাই দুটি সংখ্যারি পরিপূরক করতে হবে]
দশমিক মান | বাইনারি মান |
---|---|
-২৫ | ১১১০০১১১ |
-১২ | ১১১১০১০০ |
-৩৭ | ১১১০১১০১১(যোগ করে) |
[সরলের উত্তরে একটি সংখ্যা মাইনাস তাই একটি সংখ্যার পরিপূরক করতে হবে]
২ এর পরিপূরক |
দশমিক মান | বাইনারি মান |
-২৫ | ১১১০০১১১ |
+১২ | ০০০০১১০০ |
-১৩ | ১১১১০০১১(যোগ করে) |
ছবি : ২ এর পরিপূরক এর সাহায্যে যোগ |
২ এর পরিপূরক কেন গুরুত্বপূর্ণঃ
- ১. ২ এর পরিপূরকের মাধ্যমে ০ কে প্লাস ও মাইনাস ধরার মত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
- ২. ২ এর পরিপূরকের জন্য গাণিতিক সরল বর্তনী প্রয়োজন যা দামে সস্তা ও দ্রুত গতিতে কাজ করে।
- ৩. ২ এর পরিপূরক পদ্ধতিতে কাজ করতে যোগ ও বিয়োগের জন্য একটি মাত্র বর্তনী যথেষ্ট।
- ৪. ঝামেলা মুক্ত ও পদ্ধতি গত দিক দিয়ে বেশি সুবিধা সম্পন্ন হওয়ায় আধুনিক ডিভাইসে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon