খতিয়ান করার সহজ নিয়ম - T ছক পদ্ধতি
এখানে যা থাকছে---
-
খতিয়ানের T ছক পদ্ধতি
- সহজ পদ্ধতিতে খতিয়ানের টি ছক
- টি ছক করার নিয়ম
- টি ছক পদ্ধতিতে খতিয়ান
খতিয়ান - T ছক পদ্ধতি |
খতিয়ান কিঃ
ইংরেজি Ledger শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ তাক বা খতিয়ান। তাকে যেমন একি ধরনের জিনিস সুন্দর করে একসাথে গুছিয়ে সংরক্ষন করে রাখা হয়। তেমনি খতিয়ান বই এ একি ধরনের হিসাব সমূহ এক সাথে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। তাকের মত খতিয়ানে হিসাব সমূহ সংরক্ষন করে রাখা হয় বলে খতিয়ান কে ইংরেজিতে লেজার (Ledger) বা তাক বলে। খতিয়ানের কয়েক প্রকার বা ধরণ রয়েছে। আমাদের আজকের আলোচনা সাধারণ খতিয়ান বা General Ledger এর T ছক পদ্ধতি নিয়ে।
খতিয়ানের টি ছক পদ্ধতি বলতে কি বোঝায়ঃ
হিসাববিজ্ঞানে খতিয়ান করার দুটি পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, টি ছক পদ্ধতি ও চলমান জের ছক পদ্ধতি। টি ছক পদ্ধতিতে খতিয়ানের ছক ইংরেজি T অক্ষরের মত দেখায় বলে খতিয়ান করার এই পদ্ধতিকে টি-ছক বা T ছক পদ্ধতি বা T Chart বলে।
খতিয়ানের টি ছকের অংশ সমূহঃ
টি ছক পদ্ধতিতে খতিয়ান করতে হলে এটা মনে রাখতে হবে যে টি ছকের ২ টি অংশ রয়েছে যথা-
- ১. T এর বাম পাশ
- ২. T এর ডান পাশ
টি ছকের বাম পাশ বা T এর বাম পাশ কে টি ছকের ডেবিট (Debit) পাশ বলে। অপার দিকে T ছকের ডান পাশ বা T এর ডান পাশ কে টি ছকের ক্রেডিট (Credit) পাশ বলে। নিচের চিত্রে দেখানো হলো-
খতিয়ানের টি ছক |
খতিয়ানে T ছকের ডেবিট পাশে যা থাকেঃ
খতিয়ানের ডেবিট পাশে যে সকল ঘর কাটতে হয় তা হল-
- ১. তারিখের ঘর
- ২. বিবরণের ঘর
- ৩. জাবেদা পৃষ্ঠার ঘর
- ৪. টাকার ঘর
টি ছকের ডেবিট অংশ |
টি ছকের ডেবিট পাশে টাকার ঘরে যে হিসাবের খতিয়ান বই তৈরি করা হবে সেই হিসাবের ডেবিট টাকার পরিমাণ লিপিবদ্ধ করা হয় কিন্তু বিবরণের ঘরে ঐ হিসাবের বিপরীত এন্ট্রি বা ক্রেডিট হিসাব যে নামে আছে সেই হিসাবের নাম লিপিবদ্ধ করতে হয়। উদাহরণ হিসাবে বলতে গেলে-
T ছক পদ্ধতিতে খতিয়ানের ক্রেডিট পাশে যা থাকেঃ
খতিয়ানের ক্রেডিট পাশে যে সকল ঘর কাটতে হয় তা এর ডেবিটের ঘরের মতই, অর্থাৎ-
- ১. তারিখের ঘর
- ২. বিবরণের ঘর
- ৩. জাবেদা পৃষ্ঠার ঘর
- ৪. টাকার ঘর
টি ছকের ক্রেডিট অংশ |
উপরের জাবেদাটি দ্বারা খতিয়ানের টি ছক পদ্ধতিতে আসবাবপত্র হিসাবের খতিয়ান করতে গেলে জাবেদা বইতে যেহেতু আসবাবপত্র হিসাব ক্রেডিট তাই টি ছক পদ্ধতিতে আসবাবপত্র হিসাবের টাকা T ছকের ডান পাশে বা ক্রেডিট পাশে টাকার ঘরে লিপিবদ্ধ করতে হবে কিন্তু আসবাবপত্র হিসাবের বিপরীত এন্ট্রি বা ক্রেডিট হিসাব নগদান হিসাব হওয়ায় ঐ টাকার সোজাসুজি বিবরণের ঘরে নগদান হিসাব লিপিবদ্ধ করতে হবে।
জাবেদার সাথে খতিয়ানের সম্পর্ক ও বিপরীত অবস্থানঃ
জাবেদার সাথে খতিয়ানের কিছু মিল ও অমিল রয়েছে যা নিম্ন রূপ-
- ১. জাবেদার পর খতিয়ান করতে হয় তাই প্রশ্নে জাবেদা করতে না বললেও মনে মনে জাবেদা করে নিয়ে তবে খতিয়ান করতে হয়।
- ২. যে হিসাবের খতিয়ান করতে হবে জাবেদায় সেই হিসাব ডেবিট থাকলে খতিয়ানের ডেবিট পাশে টাকার ঘরে ডেবিট টাকার পরিমাণ লিখতে হয় কিন্তু খতিয়ানে বিবরণের ঘরে জাবেদার ডেবিট হিসাবের নাম না লিখে ক্রেডিট হিসাবের নাম লিখতে হয়। অর্থাৎ টাকা ডেবিটের হলে ডেবিট কিন্তু বিবরণের ঘরে ক্রেডিট হিসাবের নাম লিখতে হবে।
- ৩. যে হিসাবের খতিয়ান করতে হবে জাবেদায় সেই হিসাব ক্রেডিট থাকলে খতিয়ানের ক্রেডিট পাশে টাকার ঘরে ক্রেডিট টাকার পরিমাণ লিখতে হয় কিন্তু খতিয়ানে বিবরণের ঘরে জাবেদার ক্রেডিট হিসাবের নাম না লিখে ডেবিট হিসাবের নাম লিখতে হয়। অর্থাৎ টাকা ক্রেডিটের হলে ক্রেডিট কিন্তু বিবরণের ঘরে ডেবিট হিসাবের নাম লিখতে হবে।
- ৪. জাবেদার পর খতিয়ান করা হয় বলে জাবেদা বই এ খতিয়ান পৃষ্ঠা এর ঘর এবং খতিয়ান বই এ জাবেদা পৃষ্ঠা এর ঘর কাটতে হয় যাতে বোঝা যায় যে কত নং পৃষ্ঠা হতে এন্ট্রি গুলো আনা হয়েছে।
টি ছক পদ্ধতিতে জাবেদা বই হতে খতিয়ানে হিসাব লিপিবদ্ধ করার নিয়মঃ
টি ছক পদ্ধতিতে জাবেদা বই হতে খতিয়ান বই এ হিসাব লিপিবদ্ধ করতে গেলে নিম্নের নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে হবে-
- ১. যে হিসাবের খতিয়ান করা হচ্ছে জাবেদা বই হতে শুধু মাত্র সেই হিসাব আছে এমন জাবেদা গুলো এক এক করে খুজে বের করে এক এক করে টি ছকের খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
- ২. খতিয়ানের টি ছকে প্রতিটি এন্ট্রি লিখার সময় আগে টাকার ঘর তার পর বিবরণের ঘর তার পরে তারিখের ঘর পূর্ণ করতে হবে তাহলে বুঝতে সুবিধা ও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
- ৩. যে হিসাবের খতিয়ান করা হচ্ছে, জাবেদায় সেই হিসাব ডেবিট হলে খতিয়ান এর ডেবিট বা বাম পাশে টাকার ঘরে টাকার পরিমাণ লিখতে হবে এর পর বিবরণের ঘরে জাবেদার ক্রেডিটে যে হিসাবের নাম থাকবে খতিয়ানে সেই হিসাবের নাম লিখতে হবে শেষে তারিখ লিখতে হবে।
- ৪. যে হিসাবের খতিয়ান করা হচ্ছে, জাবেদায় সেই হিসাব ক্রেডিট হলে খতিয়ান এর ক্রেডিট বা ডান পাশে টাকার ঘরে টাকার পরিমাণ লিখতে হবে এর পর বিবরণের ঘরে জাবেদার ডেবিটে যে হিসাবের নাম থাকবে টি ছকের খতিয়ানে সেই হিসাবের নাম লিখতে হবে শেষে তারিখ লিখতে হবে।
উদাহরণের সাহায্যে জাবেদা হতে খতিয়ানের টি ছকে হিসাব লিপিবদ্ধের নিয়মঃ
খতিয়ান হিসাবের নাম: মূলধন হিসাব
ডেবিট | হিসাবের কোড নং- | ক্রেডিট |
তাং | বিব রণ | জা. পৃ. | টাকা | তাং | বিব রণ | জা. পৃ. | টাকা |
---|---|---|---|---|---|---|---|
২০ ৪০ ইং জানু য়ারি -১ | নগ দান হিসা ব | ৫০০ |
উপরের খতিয়ানের টি ছকটি মূলধন হিসাবের খতিয়ান। জাবেদায় দেখা যায় যে মূলধন হিসাব ক্রেডিট ৫০০ টাকা আছে তাই খতিয়ানের ক্রেডিট পাশ তথা টি ছকের ডানপাশে টাকা লেখা হয়েছে। উপরের জাবেদায় মূলধন হিসাবের সাথে বিপরীত হিসাব ছিল নগদান হিসাব, তাই খতিয়ানে যেহেতু বিপরীত হিসাবের নাম লিখতে হয় তাই বিবরণের ঘরে নগদান হিসাব লেখা হয়েছে, তারিখের ঘরে তারিখ দেওয়া হয়েছে, জাবেদা পৃষ্ঠার ঘরে জাবেদা পৃষ্ঠা নং দিতে হয় বা না দিলেও চলে তাই ফাকা রাখা হয়েছে।
সাধারণ খতিয়ান বহি (T ছক পদ্ধতি)
খতিয়ান হিসাবের নাম: নগদান হিসাব
ডেবিট | হিসাবের কোড নং- | ক্রেডিট |
তাং | বিব রণ | জা. পৃ. | টাকা | তাং | বিব রণ | জা. পৃ. | টাকা |
---|---|---|---|---|---|---|---|
২০ ৪০ ইং জানু য়ারি -১ | মূল ধন হিসা ব | ৫০০ |
উপরের টি ছকটি নগদান হিসাবের খতিয়ান। জাবেদায় দেখা যায় যে নগদান হিসাব ডেবিট ৫০০ টাকা, তাই খতিয়ানের ডেবিট পাশ তথা টি ছকের বামপাশে টাকা লেখা হয়েছে। উপরের জাবেদায় নগদান হিসাবের সাথে বিপরীত হিসাব ছিল মূলধন হিসাব, তাই খতিয়ানে যেহেতু বিপরীত হিসাবের নাম লিখতে হয় তাই বিবরণের ঘরে মূলধন হিসাব লেখা হয়েছে, তারিখের ঘরে তারিখ দেওয়া হয়েছে, জাবেদা পৃষ্ঠার ঘরে জাবেদা পৃষ্ঠা নং দিতে হয় বা না দিলেও চলে তাই ফাকা রাখা হয়েছে।
খতিয়ানের টি ছকে উদ্বৃত্ত বা ব্যালেন্স কিঃ
টি ছকের খতিয়ানে দুটি পাশ থাকে বামপাশ বা ডেবিট পাশ এবং ডানপাশ বা ক্রেডিট পাশ। ডেবিট পাশের মোট টাকা ক্রেডিট পাশের মোট টাকার সমান নাও হতে পারে। যে পাশের মোট টাকা বেশি তা থেকে কম পাশের মোট টাকা বিয়োগ করলে যে টাকা পাওয়া যায় তাকে উদ্বৃত্ত বলে। সহজ কথায় ডেবিট ও ক্রেডিট পাশের টাকার পার্থক্য কে উদ্বৃত্ত বা ব্যালেন্স বলে। টি ছকের খতিয়ানে উদ্বৃত্ত নির্ণয় করতে হলে প্রথমে ডেবিট পাশের টাকা যোগ করে রাফে বা খসড়া কাগজে লিখে রাখতে হবে তার পর ক্রেডিট পাশের টাকা যোগ করে রাফে বা খসড়া কাগজে লিখে রাখতে হবে। এর পর দুই পাশের মোট টাকা বিয়োগ করে উদ্বৃত্ত নির্ণয় করতে হবে। উদ্বৃত্ত নির্ণয় করার পর তা যে পাশে কম টাকা হয়েছে সে পাশের টাকার ঘরে লিখতে হবে এবং বিবরণের ঘরে লিখতে হবে উদ্বৃত্ত, কিন্তু তারিখের ঘরে কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। ছোট পাশে উদ্বৃত্তের টাকা লেখার পর ডেবিট ও ক্রেডিট পাশের টাকার পরিমাণ সমান হয়ে যায় এবং তখন উভয় পাশে মোট টাকার ঘরে মোট টাকার পরিমাণ লিখে তার নিচে ডাবল দাগ বা দুটি দাগ বা ক্লোজিং সাইন দিয়ে খতিয়ান শেষ করতে হয়।
T ছকে খতিয়ানের উদাহরণ ও ব্যখ্যাঃ
প্রশ্নে শুধু মাত্র নগদান হিসাবের খতিয়ান করতে বলা হয়েছে তাই যেসকল জাবেদায় নগদান হিসাব আছে শুধুমাত্র সে সকল জাবেদা নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য নির্বাচন করতে হবে। ৩ ও ২৫ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব নেই বলে ৩ ও ২৫ তারিখের জাবেদা নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য প্রযোজ্য হবে না। তাই নগদান হিসাবের খতিয়ানের জন্য ১, ২, ৫, ৬ এবং ৩০ তারিখের জাবেদা নির্বাচন করতে হবে।
সাধারণ খতিয়ান (T ছক পদ্ধতি)
খতিয়ান হিসাবের নাম: নগদান হিসাব
ডেবিট | হিসাবের কোড নং- | ক্রেডিট |
তারি খ | বিব রণ | জা. পৃ. | টাকা | তারি খ | বিবর ণ | জা. পৃ. | টাকা |
---|---|---|---|---|---|---|---|
২০ ৪০ ইং জানু -১ | মূল ধন হিসা ব | ১০০০ | ২০ ৪০ ইং জানু -২ | উত্ত লোন হিসা ব | ১০০ | ||
জানু -৫ | দেনা দার হিসা ব | ৫০০ | জানু -৬ | ক্রয় হিসাব | ৬০০ | ||
জানু -৩০ | বিক্র য় হিসা ব | ৮০০ | উদ্বৃ ত্ত(পা র্থক্য) | ১৬০০ | |||
মোট | ২৩০০ ____ | মোট | ২৩০০ ____ |
- ১ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব ডেবিট বলে খতিয়ানের ডেবিট তথা বামপাশে টাকার ঘরে টাকা লেখা হয়েছে এবং বিবরণের ঘরে নগদান হিসাবের বীপরিত হিসাব মূলধন হিসাব জাবেদায় থাকায় মূলধন হিসাব লেখা হয়েছে।
- ২ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব ক্রেডিট বলে খতিয়ানের ক্রেডিট তথা ডানপাশে টাকার ঘরে টাকা লেখা হয়েছে এবং বিবরণের ঘরে নগদান হিসাবের বীপরিত হিসাব উত্তলোলন হিসাব জাবেদায় থাকায় উত্তলোন হিসাব লেখা হয়েছে।
- ৫ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব ডেবিট বলে খতিয়ানের ডেবিট তথা বামপাশে টাকার ঘরে টাকা লেখা হয়েছে এবং বিবরণের ঘরে নগদান হিসাবের বীপরিত হিসাব দেনাদার হিসাব জাবেদায় থাকায় দেনাদার হিসাব লেখা হয়েছে।
- ৬ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব ক্রেডিট বলে খতিয়ানের ক্রেডিট তথা ডানপাশে টাকার ঘরে টাকা লেখা হয়েছে এবং বিবরণের ঘরে নগদান হিসাবের বীপরিত হিসাব ক্রয় হিসাব জাবেদায় থাকায় ক্রয় হিসাব লেখা হয়েছে।
- ৩০ তারিখের জাবেদায় নগদান হিসাব ডেবিট বলে খতিয়ানের ডেবিট তথা বামপাশে টাকার ঘরে টাকা লেখা হয়েছে এবং বিবরণের ঘরে জাবেদায় নগদান হিসাবের বীপরিত হিসাব বিক্রয় হিসাব থাকায় বিক্রয় হিসাব লেখা হয়েছে।
আশাকরি সকলে খতিয়ানের টি ছক (T chart) সম্পর্কে খুব সহজে বিস্তারিত জানতে ও শিখতে পেরেছি। নতুন কিছু জানতে নিচে কমেন্ট করুন।
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon