শনিবার

বাছুরের নাভি পাকা বা নাভি ফোলা রোগ

গরুর নাভি পাকা রোগ বা নাভিতে ঘা - ওষুধ ও চিকিৎসা


এখানে যা থাকছে---

  • বাছুরের নাভি পাকা রোগ
  • গরুর নাভি পাকা রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা
  • গরুর নাভিতে ঘা বা ক্ষত
  • গরু বা বছুরের নাভি পচা বা নাভি প্রদাহ

বাছুরের নাভি পাকা রোগ, গরুর নাভি পাকা রোগের ওষুধ ও চিকিৎসা, গরুর নাভিতে ঘা বা ক্ষত, গরু বা বছুরের নাভি পচা বা নাভি প্রদাহ
গরুর নাভি পাকা রোগ ও চিকিৎসা


গরু ও বাছুরের নাভি পাকা রোগের কারণঃ

গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগ বা Naval Ill মারাত্মক সংক্রমণ জাতীয় একটি রোগ। গরু বা বাছুরের নাভি ফুলে গেলেই ধরে নিতে হবে নাভিতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটেছে। গরুর নাভি পাকা বা নাভি ফোলা বা নাভি পচা রোগ ব্যাকটেরিয়া ঘটিত এক ধরণের রোগ। বয়ষ্ক গরুর চেয়ে বাছুরের নাভি পাকা রোগ বেশি দেখা দেয়। সাধারন্ত ২ দিন থেকে ৩ মাস বয়সের বাছুরের নাভি পাকা, নাভি ফোলা বা নাভিতে ঘা বা ক্ষত রোগ (Naval ill of Calf) বেশি পরিলক্ষিত হয়। Staphylococcus নামক এক ধরণের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে গরুর নাভী ফোলা বা নাভি পাকা রোগ হয়ে থাকে। ছ্যাতছেতে আদ্র ও কর্দমাক্ত পরিবেশে Staphylococcus ব্যাকটেরিয়া বেচে থাকে ও বংশ বিস্তার করার উপযুক্ত পরিবেশ পায়। নবজাতক বাছুরের নাভিতে ঝুলে থাকা কাচা নাড়িতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে নাভি পচা বা নাভি ফোলা রোগ সৃষ্টি করে। বয়ষ্ক গরুর ক্ষেত্রে নাভিতে প্রাথমিক ক্ষত ও ক্ষতে মাছির আক্রমণে নাভি পচা রোগ দেখা দেয়। গরু বা বাছুরের নাড়ি বা নাভি লিভারের সাথে সরাসরি যুক্ত থাকে। নাভি পাকা রোগে জীবাণু সহজে নাভির মাধ্যমে লিভার বা যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে জীবাণু রক্তে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের মাধ্যমে গরুর লাঞ্চ বা ফুসফুস, বিভিন্ন অস্থি বা হাড়, মস্তিষ্ক সহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারে। তাই নাভি পচা বা নাভি ফোলা বা নাভি পাকা রোগের দ্রুত চিকিৎসা না করালে গরু বা বাছুরের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।



গরু বা বাছুরের নাভিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণঃ

গরু বা বাছুরের যে সকল কারণে নাভি পাকা রোগের উৎপত্তি হয় বা নাভিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে তা নিম্নরূপ-

  • ১. ভেজা ও স্যাতছেতে পরিবেশে গরু পালন করলে অর্থাৎ ভেজা কর্দমাক্ত স্থানে গরু বা বাছুর দীর্ঘক্ষণ থাকলে গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগ দেখা দিতে পারে।
  • ২. জন্মের পর জীবাণু মুক্ত ব্লেড বা ছুরি দিয়ে বাছুরের নাভিতে যুক্ত নাড়ি না কাটলে এবং বাছুরের নাভিতে যুক্ত নাড়িতে নিয়মিত জীবাণুনাশ ব্যবহার না করলে বাছুরের নাভি পচা রোগ দেখা দিতে পারে।
  • ৩. জন্মের পর বাছুরের নাভি ঘন ঘন গাভী চাটতে থাকলে বাছুরের নাভি পচা বা নাভি পাকা রোগ দেখা দিতে পারে।
  • ৪. গরু বা বাছুরের নাভিতে কোনো কারণে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হলে এবং তাতে মাছি বসে ডিম পাড়লে ক্ষত বা ঘা এ মাছির লার্ভা জন্মায় এবং তা বাছুর বা গরুর নাভি পচা রোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • ৫. জন্মের পর বাছুর পরিমিত মাত্রায় শাল দুধ বা কোলেস্ট্রম না পেলে অপুষ্টিতে ভোগে এবং রোগজীবাণু সহজেই আক্রমণ করে ফলে বাছুরের নাভি পাকা রোগ দেখা দিতে পারে।
  • ৬. নিয়মিত বাছুর ও গরুর পরিচর্যা, চেকাপ ও চিকিৎসা না করালে বিভিন্ন রোগজীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে রোগাক্রান্ত করে ফেলে, নাভি পাকা রোগ এসকল ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের মধ্যে অন্যতম।



গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের লক্ষণঃ

বাছুরের নাভি পাকা বা বাছুরের নাভি ফোলা বা গরুর নাভি পচা রোগের লক্ষণ সমূহ নিম্নরূপ-

  • ১. বাছুরের নাভি পাকা রোগের প্রাথমিক লক্ষণ বাছুরের নাভি ফুলে ওঠা।
  • ২. বাছুরের নাভি পাকা রোগের অন্যতম আরেকটি লক্ষণ বাছুরের নাভি দিয়ে পুজ বা রক্ত বের হওয়া।
  • ৩. গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগ হলে বাছুর বা গরুর গায়ে মৃদু থেকে মাঝারি পর্যায়ে এমনকি ১০৫ ডিগ্রি  থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা দেখা দিতে পারে।
  • ৪. বাছুরের নাভি পাকা রোগ দেখা দিলে বাছুর বার বার নাভি চাটতে চেষ্টা করে।
  • ৫. বাছুরের নাভি পাকা রোগে বাছুরের নাভিতে ব্যথা থাকায় বাছুর নড়তে চড়তে সমস্যা বোধ করে এবং দুধ পানে অনিহা প্রকাশ করে।
  • ৬. গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগে গরু বা বাছুর ঝুপ মেরে দাঁড়িয়ে থাকে, খাবার গ্রহণে অনিহা প্রকাশ করে এবং ধীরেধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • ৭. গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগে নাভিতে মাছি লাগার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, মাছি বসে ডিম পাড়ে ফলে গরু বা বাছুরের নাভিতে মাছির লার্ভা বা পোকা জন্মায় এবং ক্ষত বা ঘা বেড়ে মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
  • ৮. বাছুরের নাভি পাকা রোগ হলে বাছুরের ঘন ঘন প্রস্রাব করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
  • ৯. বাছুরের নাভি পাকা রোগের আরেকটি অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে বাছুরের নাভি ফুলে ওঠা ও ভেজা ভেজা ভাব প্রকাশ পাওয়া।



গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের প্রকারঃ

সংক্রমণের উপর ভিত্তি করে গরু বা বাছুরের নাভি পাকা বা নাভি পচা বা নাভি ফোলা বা নাভি প্রদাহ কে প্রধানত ৩ টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-

  • ১. গরু বা বাছুরের নাভি ফোলা বা সাধারণ নাভি প্রদাহ
  • ২. গরু বা বাছুরের নাভি পাকা বা নাভি পচা
  • ৩. গরু বা বাছুরের নাভিতে পোকা বা মারাত্মক নাভি পাকা



গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের চিকিৎসাঃ

নিম্নে ধরণ বা প্রকার অনুযায়ী গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হল-

  • গরু বা বাছুরের নাভি ফোলা বা সাধারণ নাভি প্রদাহ হলে চিকিৎসা-

    গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের প্রাথমিক অবস্থায় সাধারন্ত নাভি ফুলে যায় এ সময় দ্রুত চিকিৎসা করালে গরু বা বাছুর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে এবং মৃত্যু ঝুকি হ্রাস পায়।

    চিকিৎসা-

        ১. ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য Renamycin Vet injunction  অথবা Tetracycline Vet injunction, ৩-৪ মিলি পরিমাণ অথবা প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশ মত দিনে এক বার করে ৫ থেকে ৭ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

        ২. ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত ঘা শুকাতে Penicillin গ্রুপের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনজেকশন যেমন Pronapen Vet অথবা StreptoPen Vet injunction দিনে ১ বার করে ৫-৭ দিন প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশ মত নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

        ৩. ব্যথা নিবারণের জন্য Ketoprofen গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন KETO-A VET দিনে এক বার করে প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় ৩-৪ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

        ৪. গরু বা বাছুরের শরীরে জ্বর থাকলে জ্বর নিবারণের জন্য Paracitamol গ্রুপের ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বা সাসপেনশন বা লিকুইড প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় জ্বর না কমা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে।

        ৫. সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স জাতীয় ইঞ্জেকশন যেমন- B50-Vet প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় দিনে এক বার করে পর পর ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে। 

  • গরু বা বাছুরের নাভি পাকা বা নাভি পচা রোগের চিকিৎসা-

    গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের দ্বিতীয় পর্যায়ে গরু বা বাছুরের নাভি পেকে বা পচে পুজ রক্ত বের হতে পারে এ সময় দ্রুত চিকিৎসা না করালে গরু বা বাছুরের নাভি পচে ভয়ানক রূপ ধারণ করতে পারে।

    চিকিৎসা-

        ১. ধারালো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে নাভি কেটে পুজ বের করে দিতে হবে।

        ২. পুজ বের করার পর জীবাণুনাশ মিশ্রিত পানি বা জল যেমন পটাশ মিশ্রিত পানি বা জল দিয়ে নাভি ও ক্ষত ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

        ৩. নাভির ক্ষতের ভিতরে কাটা অংশ দিয়ে প্রতি দিন ২ বার টিংচার আয়োডিন যুক্ত জীবাণুনাশ যেমন POVIDON মাখানো গজ বা কাপড় ঢুকিয়ে দিতে হবে এবং পরিষ্কার করে নতুন গজ ব্যবহার করতে হবে।

        ৪. নিয়মিত ২ দিন POVIDON মাখানো গজ ব্যবহার করার পর গজ ব্যবহার না করে Sulpher গ্রুপের পাওডার যেমন- Sumid vet powder নাভির ভিতরে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে।

        ৫. ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত ঘা শুকাতে Penicillin গ্রুপের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনজেকশন যেমন Pronapen Vet অথবা StreptoPen Vet injunction দিনে ১ বার করে ৫-৭ দিন প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশ মত নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

        ৬. ব্যথা নিবারণের জন্য Ketoprofen গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন KETO-A VET দিনে এক বার করে প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় ৩-৪ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

        ৭. গরু বা বাছুরের শরীরে জ্বর থাকলে জ্বর নিবারণের জন্য Paracitamol গ্রুপের ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বা সাসপেনশন বা লিকুইড প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় জ্বর না কমা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে।

        ৮. সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স জাতীয় ইঞ্জেকশন যেমন- B50-Vet প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় দিনে এক বার করে পর পর ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে। 

  • গরু বা বাছুরের নাভিতে পোকা বা মারাত্মক নাভি পাকা রোগের চিকিৎসা-

    গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগের মারাত্মক পর্যায়ে গরু বা বাছুরের নাভি পেকে বা পচে পুজ রক্ত বের হওয়ার পাশাপাশি নাভিতে মাছির উপদ্রব হলে মাছি গরু বা বাছুরের নাভিতে ডিম পাড়ে ফলে এই ডিম ফুটে নাভির ক্ষতে মাছির লার্ভা জন্মায় যা মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি করে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে এ পর্যায়ে গরু বা বাছুরের নাভি সম্পূর্ণ রূপে পচে যেতে পারে এবং ভয়ানক রূপ ধারণ করে গরু বা বাছুর মারা যেতে পারে।

    চিকিৎসা-

      1. ১. ধারালো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে নাভি কেটে পুজ বের করে দিতে হবে এবং চিমটি দিয়ে ধরে পোকা বের করে দিতে হবে।

        ২. পুজ ও পোকা যথা সম্ভব বের করার পর হাইড্রজেন পার অক্সাইড দিয়ে নাভি ও ক্ষত ভালো করে পরিষ্কার করে দিতে হবে।

        ৩. নাভির ক্ষতের ভিতরে কাটা অংশ দিয়ে প্রতি দিন আইভারমেকটিন গ্রুপের ড্রপ যেমন- Ivertin drop তুলোতে মাখিয়ে অথবা সিরিঞ্জে পুরে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে।

        ৪. নিয়মিত ২-৩ দিন, দিনে ২ বার করে নাপথলিন গুড়া করে কাপড় বা গজে লাগিয়ে নাভিতে গজ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে, এবং ২-৩ দিন নাপথলিন মাখানো গজ ব্যবহার করার পর গজ ব্যবহার না করে Sulpher গ্রুপের পাওডার যেমন- Sumid vet powder নাভির ভিতরে ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিতে হবে।

        ৫. ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত ঘা শুকাতে Penicillin গ্রুপের এন্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনজেকশন যেমন Pronapen Vet অথবা StreptoPen Vet injunction দিনে ১ বার করে ৫-৭ দিন প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশ মত নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।

        ৬. ব্যথা নিবারণের জন্য Ketoprofen গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন KETO-A VET দিনে এক বার করে প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় ৩-৪ দিন প্রয়োগ করতে হবে।

        ৭. গরু বা বাছুরের শরীরে জ্বর থাকলে জ্বর নিবারণের জন্য Paracitamol গ্রুপের ট্যাবলেট বা ইনজেকশন বা সাসপেনশন বা লিকুইড প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় জ্বর না কমা পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে।

        ৮. সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স জাতীয় ইঞ্জেকশন যেমন- B50-Vet প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশিত মাত্রায় দিনে এক বার করে পর পর ৩-৫ দিন প্রয়োগ করতে হবে। 




গরু বা বাছুরের নাভি পাকা রোগ প্রতিরোধের উয়ায়ঃ

বাছুরের নাভি বা নাড়ি (আমবিলিক্যাল শিরা) জন্মের সময় ছিড়ে যায়। এমনিয়টিক মেমব্রেন, আমবিলিক্যাল ধমনী, ইউরেকাস ও আমবিলিক্যাল শিরার সমন্বয়ে নাভি বা নাভির নাড়ি গঠিত হয়। বাছুর গর্ভে থাকা অবস্থায় আমবিলিক্যাল শিরা বা নাড়ি বা নাভির মাধ্যমে মা বা গাভীর দেহ থেকে খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। বাছুর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমবিলিক্যাল কর্ড ছিড়ে যাওয়ায় ফলে আমবিলিক্যাল শিরা ও ইউরেকাস বন্ধ হয়ে গেলেও নাভির অন্যান্য অংশ উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে, ফলে বাছুরের নাভিতে সহজেই জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে। বয়ষ্ক গরুর ক্ষেত্রে নাভিতে ক্ষতের মাধ্যমে নাভি পচা রোগের সূত্রপাত হয়ে থাকে। নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো গ্রহণের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই গরু বা বাছুরের নাভি পাকা বা নাভি পচা তথা নাভিকে জীবাণু সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি-

  • ১. জন্মের পর কমপক্ষে ১০ দিন বাছুরকে শাল দুধ খাওয়াতে হবে যা ইমুনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
  • ২. আর্দ্র, ভেজা, স্যাতছেতে ও কর্দমাক্ত পরিবেশে মুক্ত শুষ্ক পরিবেশে গরু পালন করতে হবে।
  • ৩. বাছুর জন্মের পর-পরি ধারালো জীবাণু মুক্ত ব্লেড বা ছুরি দিয়ে ১ ইঞ্চি পরিমাণ নাভি বা নাড়ি (Umbilicus) রেখে বাকি অংশ কেটে ফেলতে হবে।
  • ৪. বাছুরের নাভি কাটার পর সিল্ক জাতীয় সুতা দিয়ে নাড়ির অগ্রভাগ বা মুখ বেধে দিতে হবে এবং টিংচার অব আয়োডিন যুক্ত জীবাণুনাশ যেমন POVIDON লাগিয়ে নাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে, নাড়ি শুকানো না পর্যন্ত প্রতিদিন ২ বার পভিডন লাগাতে হবে।
  • ৫. গাভীকে বাছুরের নাভী চাটা থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • ৬. বাছুরের নাভি যেন গাভীর চাটা বা কোনো কারণে গোড়া থেকে জন্মের ৭ দিনের আগে ছিড়ে না যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং কোনো কারণে ছিড়ে গেলে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে।
  • ৭. নিয়মিত বাছুরের নাভি পরীক্ষা করতে হবে নাভীতে ফোলা বা কোনো প্রকার সমস্যা পরিলক্ষিত হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে অথবা চিকিৎসা দিতে হবে।
  • ৮. গরু বা বাছুরের নাভিতে ক্ষত বা ঘা সৃষ্টি হলে জীবাণুনাশক লাগাতে হবে, দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে এবং মাছির উপদ্রব্য হতে ক্ষত রক্ষা করতে হবে, কারণ মাছি ক্ষতে ডিম পাড়ে ফলে লার্ভা জন্মায় যা পরবর্তীতে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি করে।
  • ৯. গরু বা গাভীকে নিয়মিত সকল প্রকার টিকা বা ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং পুষ্টিকর ও সুষম খাবার সরবরাহ করতে হবে।
  • ১০. গরু বা বাছুর কে নিয়মিত গোসল করাতে হবে বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon