রবিবার

গরুর কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর নিয়ম ও চিকিৎসা

গাভী, বাছুর ও গরুর কৃমি চিকিৎসা - ইঞ্জেকশন ও ট্যাবলেট


এখানে যা থাকছে---

  • গরুর কৃমিনাশক
  • গরুর কৃমির ট্যাবলেট
  • গরুর কৃমির ইনজেকশন
  • গরুর কৃমি চিকিৎসা
  • গাভী ও বাছুরের কৃমির ওষুধ

গরুর কৃমিনাশক, গরুর কৃমির ট্যাবলেট, গরুর কৃমির ইনজেকশন, গরুর কৃমি চিকিৎসা, গাভী ও বাছুরের কৃমির ওষুধ
গরুর কৃমি রোগ


গরুর কৃমি বা কৃমি রোগ কিঃ

যে সকল প্রাণী অন্য কোনো প্রাণীর দেহে বসবাস করে জীবন ধারণ করে তাদের পরজীবি প্রাণী বলে। গরুর দেহে যে সকল পরজীবি বসবাস করে তাদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

  • ১. গরুর বহিঃ পরজীবি 
  • ২. গরুর আন্তঃ পরজীবি


গরুর বাইরের দেহে যে সকল পরজীবি বসবাস করে তাদের গরুর বহিঃ পরজীবি বলে যেমন, উকুন। অন্যদিকে যে সকল পরজীবি গরুর দেহের অভ্যান্তরে বা ভিতরে বসবাস করে তাদের গরুর আন্তঃ পরজীবি বলে। গরুর দেহের অভ্যান্তরে বসবাসকারী আন্তঃ পরজীবির মধ্যে কৃমি (worm) অন্যতম। কৃমি গরুর দেহের অভ্যান্তরে বসবাস করে গরুর নানামুখী ক্ষতিসাধন করে থাকে। তাই সুস্থ ও রোগমুক্ত মোটাতাজা গরু সহ ভালো দুগদ্ধবতী গাভী পেতে গরুকে কৃমিমুক্ত করা আবশ্যক। কৃমি বা কৃমি রোগ নিরাময় ছাড়া গরু পালনে লাভবান হওয়া সম্ভব হয় না।



গরুর কৃমির প্রকারভেদঃ

গরুর দেহে বসবাস ও ক্ষতির দিক বিবেচনায় গরুর দেহে বসবাসকারী কৃমিকে ৩ শ্রেণী বা ধরনে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-

  • ১. গরুর গোল কৃমি
  • ২. গরুর পাতা কৃমি বা কলিজা কৃমি
  • ৩. গরুর ফিতা কৃমি



গরুর দেহে কৃমির অবস্থানঃ

গরুর দেহের নানান অঙ্গপ্রত্যঙ্গে কৃমি অবস্থান করে জীবিকানির্বাহ ও বংশবিস্তার করে থাকে। গরুর গোল কৃমি ও ফিতা কৃমি সাধারনত গরুর পাকস্থলী ও অন্ত্র নালীতে বসবাস করে। অপরদিকে গরুর পাতা কৃমি বা কলিজা কৃমি গরুর কলিজায় বসবাস করে। পাকস্থলী, অন্ত্র ও কলিজা ছাড়াও কৃমি গরুর চোখ, ফুসফুস ও চামড়া সহ নানান অঙ্গে অবস্থান করে বংশবিস্তার করে ও গরুর ক্ষতি সাধন করে। 



গরুর দেহে কৃমির ক্ষতিকর প্রভাবঃ

কৃমি গরুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। গরুর খাদ্যে ভাগ বসিয়ে খাদ্যের পুষ্টি কৃমি গ্রহণ করে ফলে গরু দূর্বল হয়ে পড়ে। গরুর দেহে কৃমির ক্ষতিকর প্রভাব গুলো নিম্নরূপ-

  • ১. কৃমি আক্রান্ত গরু দিন দিন দূর্বল হয়ে পড়ে ফলে দৈহিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়।
  • ২. কৃমি আক্রান্ত গরু যে পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করে সে পরিমাণে বৃদ্ধি পায় না।
  • ৩. পাতলা পায়খানা সহ নানারকম রোগে গরু নিয়মিত আক্রান্ত হতে থাকে ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
  • ৪. মাংস ও দুধ উৎপাদন কমে যায় ফলে খামারে লোকসান দেখা দিতে পারে।
  • ৫. অপুষ্ট ও দূর্বল বাছুর জন্ম নেয় এবং বাছুর জন্মানোর পর মারা যাওয়ার ঝুকি বেড়ে যায়।



গরুর কৃমি আক্রান্তের লক্ষণঃ

নিম্নোক্ত লক্ষণ গুলো দেখে বোঝা যেতে পারে যে একটি গরু বা গাভী বা বাছুর কৃমি আক্রান্ত-

  • ১. কৃমি আক্রান্ত গরু, গাভী বা বাছুর দিন দিন শুকিয়ে যেতে থাকে বা দূর্বল হয়ে পড়ে।
  • ২. কৃমি আক্রান্ত বাছুরের পেট দেহের তুলনায় বড় হয়ে ওঠে এবং দেহ দিন দিন কঙ্কালসার হয়ে পড়ে।
  • ৩. কৃমি আক্রান্ত গাভী, বাছুর বা গরু যে পরিমাণ খাবার খায় সে পরিমাণে বেড়ে ওঠে না।
  • ৪. কৃমি আক্রান্ত গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়।
  • ৫. কৃমি আক্রান্ত বাছুরের পশম বা গায়ের লোম দিনদিন বড় হয়ে যায়।
  • ৬. কৃমি আক্রান্ত গরুর দেহের লোম উষ্ক খুষ্ক ও চামড়া অমসৃন দেখায়।
  • ৭. কৃমি আক্রান্ত গরুর পায়খানা নরম বা পাতলা পায়খানা লেগে থাকতে পারে এমনকি মাঝে মাঝে পায়খানা বা গোবোর শক্ত হয়ে কোষ্ট কাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
  • ৮. কৃমি আক্রান্ত গরুর পেটের হাড় গুলো ভেসে ওঠে এবং গায়ের মাংস শুকিয়ে যেতে থাকে।
  • ৯. কৃমি আক্রান্ত গরুর পায়খানা দুর্গন্ধ যুক্ত হতে পারে।
  • ১০. কৃমি আক্রান্ত গরুর পায়খানা বা গোবোরে কৃমি দেখা যেতে পারে বা পাওয়া যেতে পারে।
  • ১১. গরু অধিক পরিমাণে কৃমি আক্রান্ত হলে গরুর গলার নিচে পানি জমে ফুলে উঠতে পারে।
  • ১২. কৃমি আগ্রান্ত বকনা বা গাভী সহজে ডাকে বা হিটে আসে না।
  • ১৩. কৃমি আক্রান্ত গাভী বা বকনা ডাকে বা হিটে আসলেও সহজে কন্সিভ বা গর্ভধারণ করে না।
  • ১৪. কৃমি আক্রান্ত বাছুর অলস ও দূর্বল হয়ে পড়ে, এমনকি হাটতে চলতে দূর্বলতা প্রকাশ করে।
  • ১৫. কৃমি আক্রান্ত গরু খাদ্যগ্রহন কমিয়ে দিতে পারে এবং গরুর ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে।
  • ১৬. কৃমি আক্রান্ত গরু অধিক খাদ্যগ্রহণ করলেও তেমন শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং দিনদিন রক্ত শূন্য হয়ে পড়ে।


উপরোক্ত লক্ষণ গুলোর এক বা একাধিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে ধরে নিতে হবে বাছুর, গাভী, এড়ে বা গরু কৃমি আক্রান্ত।



বাছুরের কৃমিনাশক ওষুধ চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ

বাছুর কে কৃমি মুক্ত করতে নিম্নোক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • ১. বাছুর মা এর গর্ভে থাকা কালীন মা গরু কে নিয়মিত ক্রিমিনাশক ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. বাছুর জন্ম নেওয়ার ৫-৭ দিনের মাঝে পাইপেরাজিন সাইট্রেট গ্রুপের কৃমিনাশক পাওডার বা লিকুইড যেমন- Ascarex Powder 100 অথবা 500 mg জিহবায় মাখিয়ে খাওয়াতে হবে অথবা লিকুইড বা তরল পেলে তা খাওয়াতে হবে।
  • ৩. বাছুরের বয়স এক মাস পূর্ণ হলে একটি এলবেন্ডেজল গ্রুপের ক্রিমিনাশক যেমন - Almex vet খাওয়াতে হবে।
  • ৪. বাছুরকে কৃমি মুক্ত রাখতে বাছুরের ৬ মাস বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ টি করে এলবেন্ডাজল গ্রুপের কৃমিনাশক যেমন- Almex vet খাওয়াতে হবে। প্রথম ৩ মাসে ১ টি করে খাওয়ানোর পর ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ মাসে প্রতি ৩৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি করে Almex vet খাওয়াতে হবে।
  • ৫. বাছুরের বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে এর পর প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর প্রতি ৩৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এলবেন্ডাজল গ্রুপের ক্রিমিনাশক যেমন - Almex vet খাওয়াতে হবে।
  • ৬. বাছুরের ১.৫-২ বছর বয়সে কলিজা বা পাতা কৃমি রোধ করতে Lvermectin & Clorsulon গ্রুপের ইনজেকশন যেমন- A-Mectin Plus অথবা নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন- নাইট্রনেক্স ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৭. প্রতিবার কৃমইনাশক দেওয়ার পরের দিন থেকে বাছুরকে পরপর ৪-৫ দিন লিভার টনিক লিকুইড যেমন - লিভাটন পরিমিত মাত্রায় খাওয়াতে হবে।



গর্ভবতী গাভীর কৃমিনাশক ওষুধ চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ

গর্ভবতী গাভীকে নিম্নোক্ত নিয়মে ক্রিমিনাশক ঔষুধ দেওয়া যেতে পারে-

  • ১. গর্ভবতী গাভীকে গর্ভধারণের ১ মাস পর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে খাওয়াতে হবে।
  • ২. গর্ভের ৪ মাস পর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে খাওয়াতে হবে।
  • ৩. গর্ভের ৭ মাস পর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে খাওয়াতে হবে।
  • ৪. কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরের দিন থেকে পরপর ৫ দিন লিভারটনিক সিরাপ যেমন - লিভাটন নির্ধারিত মাত্রায় খাওয়াতে হবে।
  • ৫. কৃমি নাশক খাওয়ানোর পরের দিন থেকে পরপর ৭ দিন জিংক লিকুইড বা সিরাপ ২০-৫০ মিলি করে খাওয়াতে হবে।



দুগ্ধ বতী গাভীর কৃমিনাশক ওষুধ চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ

দুগ্ধ বতী গাভীকে অধিক দুধ প্রদানের সময় কৃমিনাশক না খাওয়ানো উত্তম। তবে দুগ্ধ বতী গাভীকে গর্ভধারন করানোর আগে বা সিমেন বা বীজ দেওয়ার আগে ক্রিমিনাশক ব্যবহার করা ভালো। দুগ্ধ বতী গাভীকে নিম্নোক্ত নিয়মে ক্রিমিনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে-

  • ১. বাছুর জন্মের ৪৫ দিন পর দুগ্ধ বতী গাভীকে Lvermectin & Clorsulon গ্রুপের ইনজেকশন যেমন- A-Mectin Plus অথবা নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন- নাইট্রনেক্স ইঞ্জেকশন নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. উপরোক্ত ডোজ প্রয়োগের ১ মাসের মাঝে দুগ্ধবতী গাভী ডাকে আসলে কন্সিভ না করালে বা সিমেন প্রয়োগ না করলে বা ১ মাসের মাঝে গর্ভবতী না হলে ১ মাস পর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে খাওয়াতে হবে। এভাবে গাভী শুকনো বা গর্ভ হীন  থাকা পর্যন্ত প্রতি ৩ মাস অন্তর কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে।
  • ৩. প্রতিবার কৃমিনাশক প্রয়োগের পরের দিন থেকে পরপর ৫ দিন লিভারটনিক নির্ধারিত মাত্রায় খাওয়াতে হবে।



ষাড় বা এড়ে বা যে কোনো গরুর কৃমিনাশক ওষুধ চিকিৎসা ও প্রতিরোধঃ

যে কোনো গরু বা মোটাতাজা করণে বাছাই কৃত গরুকে নিম্নোক্ত নিয়মে কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে-

  • ১. গরুকে Lvermectin & Clorsulon গ্রুপের ইনজেকশন যেমন- A-Mectin Plus অথবা নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন- নাইট্রনেক্স ইঞ্জেকশন নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. Lvermectin & Clorsulon গ্রুপের ইনজেকশন যেমন- A-Mectin Plus অথবা নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন প্রয়োগের ৭ দিন পর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে খাওয়াতে হবে।
  • ৩. প্রতি বছর একবার Lvermectin & Clorsulon গ্রুপের ইনজেকশন যেমন- A-Mectin Plus অথবা নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৪. প্রতি ৩-৪ মাস অন্তর Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
  • ৫. প্রতিবার কৃমিনাশক প্রয়োগের পরের দিন থেকে পরপর ৫ দিন লিভারটনিক সিরাপ বা লিকুইড খাওয়াতে হবে।
  • ৬. কৃমিনাশক প্রয়োগের পরের দিন থেকে পরপর ৩ দিন ৩০-৫০ মিলি করে জিংক সিরাপ খাওয়ানো উত্তম।



রোগাক্রান্ত গরুর কৃমি চিকিৎসাঃ

কোনো গরু কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে দূর্বল ও রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লে নিম্নোক্ত ভাবে চিকিৎসা করতে হবে-

  • ০. প্রথমে গরুর অন্যান্য রোগ ওষুধ ও চিকিৎসার মাধ্যমে সেরে তুলতে হবে। এবং রোগ মুক্তির পর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
  • ১. কলিজা বা পাতা কৃমি মুক্ত করার জন্য গরুকে সর্ব প্রথম নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন যেমন- নাইট্রনেক্স ইঞ্জেকশন নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. নাইট্রক্সিনিল গ্রুপের ইঞ্জেকশন প্রয়োগের ৭ দিন পর গোল কৃমি ও ফিতা কৃমি মুক্ত করতে গরুকে Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের ট্যাবলেট যেমন - Renadex vet প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য একটি হারে নিয়মিত খাওয়াতে হবে।
  • ৩. ক্রিমিনাশক খাওয়ানোর পরের দিন থেকে পরপর ৫ দিন লিভারটনিক সিরাপ যেমন - লিভাটন খাওয়াতে হবে।
  • ৪. কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর থেকে নিয়মিত গরুকে ২০-৫০ মিলি করে জিংক সিরাপ বা লিকুইড খাওয়াতে হবে।
  • ৫. গরুকে কৃমিনাশক খাওয়ানোর ১০ দিন পর থেকে মাল্টিভিটামিন ও মাল্টিমিনারেল প্রমিক্স যেমন- ডিসিপি প্লাস বা রেনা গোল্ড প্লাস গরুকে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
  • ৬. প্রতিদিন নিয়মিত ভিটামিন AD3E সিরাপ নির্ধারিত মাত্রায় খাওয়াতে হবে অথবা মাসে ২ বার ভিটামিন AD3E ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৭. ক্যালসিয়াম সিরাপ যেমন রেনা ক্যাল পি ৫০-১০০ মিলি করে গরুকে খাওয়াতে হবে।



গরুর চোখে কৃমির প্রতিকার ও চিকিৎসাঃ

গরুর চোখ সাধারনত মাছি বা ডাশ মাছির মাধ্যমে কৃমি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে গরু অন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে-

  • ১. প্রথমে বোরিক পাওডার পানিতে মিশিয়ে গরুর চোখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • ২. সিপ্রফ্লক্সাসিন ও ডেক্সামেথাসন গ্রুপের এন্টিবায়োটিক যেমন - সিপলক্স-ডি গরুর আক্রান্ত চোখে ৫ ফোটা করে ৫ ঘন্টা অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৩. আইভারমেকটিন গ্রুপের ইনজেকশন প্রতি ১ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.২ মিলি গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হবে।



গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর নিয়মঃ

গরুকে কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর জন্য নিম্নোক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করতে হবে-

  • ১. সকালে খালি পেটে গরুকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
  • ২. কৃমিনাশক পানি বা জলে গুলিয়ে বোতলে করে খাওয়ানো যেতে পারে অথবা গুড়ো করে গুড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে অথবা কলা পাতায় মুড়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
  • ৩. কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর কমপক্ষে ১ ঘন্টার মাঝে গরুকে কোনো প্রকার খাবার খাওয়ানো যাবে না।
  • ৪. Levamisole + Triclabendazole গ্রুপের কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর গরুকে প্রচুর পরিমাণে পানি বা জল খাওয়ানো উচিত তবে জল বা পানি ছাড়া ১ ঘন্টার মাঝে অন্য কোনো খাদ্য খাওয়ানো যাবে না।
  • ৫. কৃমিনাশক প্রয়োগের দিন গরুকে অবশ্যই গোসল করাতে হবে এবং সর্বদা ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
  • ৬. গর্ভবতী গরুকে গর্ভের ৮ মাস পর কৃমিনাশক প্রয়োগ উচিত নয়।
  • ৭. কৃমির ওষুধ গরুকে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি মাত্রায় খাওয়ালে সমস্যা নেই তবে নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম খাওয়ালে গরু কৃমি মুক্ত হবে না।
  • ৮. কৃমিনাশক প্রয়োগের পরের দিন থেকে পরপর ৪-৫ দিন গরুকে লিভারটনিক ও জিংক সিরাপ খাওয়াতে হবে।
  • ৯. কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ানোর দিন গরুকে ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে ও গোসল করাতে হবে।



গরুকে কৃমির ইনজেকশন প্রয়োগের নিয়মঃ

  • ১. সকালে খালি পেটে ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ২. কৃমির ইনজেকশন গরুর গলার চামড়া টেনে ধরে চামড়ার নিচে প্রোয়োগ করতে হবে, মাংশ ও শিরায় প্রয়োগ করা যাবে না।
  • ৩. ইনজেকশন প্রয়োগের পর কমপক্ষে ১ ঘন্টা কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।
  • ৪. ইনজেকশন প্রয়োগের দিন গরুকে ছায়া ও ঠান্ডা যুক্ত স্থানে রাখতে হবে।
  • ৫. ইনজেকশন প্রয়োগের দিন গরুকে অবশ্যই গোসল করাতে হবে।
  • ৬. ইনজেকশন প্রয়োগের পরের দিন থেকে গরুকে ৪-৫ দিন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে এবং ৩-৪ দিন জিংক সিরাপ খাওয়াতে হবে।
  • ৭. কৃমিনাশক ইনজেকশন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম মাত্রায় করলে কাজ করবে না, কৃমির ইনজেকশন নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি করলে সমস্যা নেই তাই ভালো কাজের জন্য দ্বিগুণ মাত্রায়  ইনজেকশন প্রোয়োগ করতে হবে।



গরুর কৃমি পতিরোধে করণীয়ঃ

  • ১. গরুকে সকালের ভেজা ঘাস ও জলে ডোবা ঘাস বা বর্ষার জলে দ্রুত বেড়ে ওঠা ঘাস খাওয়ানো থেকে বিরত রাখতে হবে।
  • ২. গরুকে শামাক মুক্ত জমির ঘাস ও খড় খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে।
  • ৩. গরুকে নিয়মিত কৃমিনাশক দিতে হবে।
  • ৪. গরুকে ঘাস ও খড় ছোট ছোট করে খাওয়াতে হবে।
  • ৫. কৃমিমুক্ত রাখতে গরুকে সর্বদা শুকনো পরিবেশে রাখতে হবে।
  • ৬. ছ্যাত ছেতে ও ভেজা জায়গায় কৃমির উপযুক্ত পরিবেশ বিধায় এইসমস্ত স্থানে গরু বাধা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • ৭. নিয়মিত গোয়াল ও গরুর খাবার পাত্র জিবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • ৮. সপ্তাহে ১ বার গরুর গোবর পরীক্ষা করে দেখতে হবে যে এতে কৃমি আছে কি না।
  • ৯. খমার বা গোয়ালের সকল সুস্থ ও কৃমি আক্রান্ত  গরুকে একসাথে কৃমির ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
  • ১০. গোয়াল প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ বার পরিষ্কারের পাশাপাশি গোয়াল মশা-মাছির উপদ্রব মুক্ত রাখতে হবে।
  • ১১. গরুর খামার বা গোয়াল ঘর উচু ও বেলে মাটি দ্বারা তৈরি করতে হবে।.
  • ১২. গোয়ালের চারধারে পানি জমতে দেওয়া যাবে না এবং খামারের ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।



গরুর কিছু কৃমিনাশক ওষুধের নামঃ

গরুর কৃমিনাশক পাওডার-

পাইপারজিন পাউডার, মেনাফেক্স পাওডার, কোপেন পাওডার, রিনটাল পাওডার।


গরুর কৃমিনাশক ট্যাবলেট-

ট্রাইক্লাবেনডাজল + লিভামিসল ট্যাবলেট, এলবেনডাজল ট্যাবলেট, রেনাডেক্স ভেট ট্যাবলেট, ইনডেক্স ভেট ট্যাবলেট, এলটি ভেট ট্যাবলেট, এন্টিওয়ার্ম ভেট ট্যাবলেট, নেমাফেক্স ট্যাবলেট বা বোলাস, প্যারাজল ট্যাবলেট, ফেনভিক ভেট ট্যাবলেট।


গরুর কৃমিনাশক লিকুইড বা সিরাপ বা ওরাল সলুশন-

আইভারমেকটিন সলুশন।


গরুর কৃমিনাশক ইনজেকশন-

লিভামিসল ইনজেকশন, নাইট্রক্সিনিল ইনজেকশন, আইভারমেকটিন ইনজেকশন, নাইট্রনেক্স ইনজেকশন, টোডাক্স ইনজেকশন।


নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon