গরুর ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার চিকিৎসা ও করণীয়
এখানে যা থাকছে---
-
গরুর পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
- গরুর পাতলা পায়খানার চিকিৎসা
- গরুরর পাতলা পায়খানার ওষুধ
- গরুর ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা
গরুর পাতলা পায়খানা |
গরুর পাতলা পায়খানার কারণঃ
গরুর ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা বা উদরাময় (Diarrhea) হওয়ার অসংখ্য কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত দানাদার জাতীয় খাদ্য গ্রহণের ফলেও অনেক সময় গরুর ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। অনেক সময় ড্রেনের পানিতে জন্মানো ব্যালানটিডিয়াম কলাই (Balantidium Coli) খাবার ও পানির সাথে গরুর পেটে প্রবেশ করলে বদহজম এর পাশাপাশি ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। এছাড়া খাদ্যে অনিয়ম, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ সহ নানাবিধ কারণে গরুর বদহজমের সাথে ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা বা উদারাময় দেখা দিতে পারে। অনেক সময় পাতলা পায়খানার সাথে আমাশয় বা রক্ত আমাশয় দেখাদিতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে পাতলা পায়খানা হয়ে গরুর মৃত্যু ঝুকি তৈরি হয়।
গরুর পাতলা পায়খানা বা উদারাময়ের প্রকারভেদঃ
ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও বিপাকীয় সমস্যার করণে গরুর বিভিন্ন প্রকার পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া জনিত জটিলতা দেখা দেয়। জটিলতা ও পাতলা পায়খানার উৎপত্তিগত দিক দিয়ে গরুর পাতলা পায়খানাকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
- ১. গরুর সাধারণ পাতলা পায়খানা
- ২. গরুর ডায়রিয়া জনিত পাতলা পায়খানা
- ৩. গরুর ব্যালানটিডিয়াসিস পাতলা পায়খানা
- ৪. গরুর বিপাকীয় পাতলা পায়খানা
উপরোক্ত প্রকারভেদ সমূহের কারণ, প্রতিকার, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সহ ওষুধ পত্রের কিছু ধারণা নিচে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা করা হলো।
গরুর সাধারণ পাতলা পায়খানাঃ
অজানা কারনে বা খাবারে আশ জাতীয় উপাদানের অপর্যাপ্ততার কারণে বা অপরিষ্কার পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে গরুর পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে। এমতাবস্থায় চিকিৎসা না করালে ধীরেধীরে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে, দূর্বল হয় এমনকি মারাও যেতে পারে।
গরুর সাধারণ পাতলা পায়খানার চিকিৎসাঃ
বাছুর ও গর্ভবতী গাভীর ক্ষেত্রে-
- ১. সালফা-৩ (বোলাস বা ট্যাবলেট) - ৩৫ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১ টি করে এক ডোজ খাওয়ানোর ৯-১০ ঘন্টা পর আরেক ডোজ অর্থাৎ দিনে ২ ডোজ, ২য় ডোজ খাওয়ানোর ৯-১০ ঘন্টা পর অর্থাৎ পরের দিন থেকে ১ম বা ২য় ডোজের অর্ধেক পরিমাণে ৩য় ডোজ খাওয়াতে হবে, এভাবে পায়খানা কমা না পর্যন্ত দিনে ২ বার করে খাওয়াতে হবে, পায়খানা না কমলে প্রয়োজনে পরের ডোজ গুলোর মাত্রা ১ম ডোজের সমপরিমাণ করতে হবে।
- ২. মেট্রানিডাজল ভেট (বোলাস বা ট্যাবলেট) - ২০০ কেজি ওজনের জন্য ৬ টি করে দিনে ১ ডোজ করে পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চলবে ।
- ৩. জিংক সিরাপ - ১৫-২০ মিলি করে দিনে ২ বার, পায়খানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত।
- ৪. Biogut পাওডার - ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১০ গ্রাম করে সকাল বিকাল ২ বার করে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৫. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইঞ্জেকশন ৫-১০ মিলি করে ৩ দিন প্রয়োগ করতে হবে।
- ৬. Glucolyte vet বা Electrolyte বা গবাদিপশুর স্যালাইন - দিনে ২-৩ টা করে খাওয়াতে হবে পায়খানা না কমা পর্যন্ত।
- ৭. পায়খানা সারার পর নিয়মিত প্রতিদিন ১ টি করে Biolact vet ট্যাবলেট ১৫ দিন খাওয়াতে হবে।
এঁড়ে বা বলদ গরুর ক্ষেত্রে-
- ১. সালফা ৩ ভেট - সকাল ও বিকাল ৩৫ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১ টি করে দিনে ২ বার করে ২ দিন, এবং ৩য় দিন থেকে অর্ধ মাত্রায় দুই বার করে পায়খানা কমা না পর্যন্ত খাওয়াতে হবে, পায়খানা ঘন হয়ে না আসলে পরের ডোজ গুলো ১ম ডোজের পরিমাণে বাড়াতে হবে।
- ২. জিংক সিরাপ - ১৫-২০ মিলি করে দিনে ২ বার, পায়খানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত।
- ৩. রুচিবর্ধক পাউডার যেমন, এস.আর.রুচি বা রুচিমিক্স পাওডার - ১ প্যাকেট করে দিনে ২ বার রোগ সারা না পর্যন্ত।
- ৪. Biogut পাওডার - ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১০ গ্রাম করে সকাল বিকাল ২ বার করে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৫. Glucolyte vet বা Electrolyte বা গবাদিপশুর স্যালাইন - দিনে ২-৩ টা করে খাওয়াতে হবে পায়খানা না কমা পর্যন্ত।
- ৬. মেট্রানিডাজল ভেট (বোলাস বা ট্যাবলেট) - ২০০ কেজি ওজনের জন্য ৬ টি করে প্রতিদিন এক ডোজ পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত চলবে ।
- ৭. পায়খানা সারার পর নিয়মিত প্রতিদিন ১ টি করে Biolact vet ট্যাবলেট ১৫ দিন খাওয়াতে হবে।
গরুর ডায়রিয়া জনিত পাতলা পায়খানার লক্ষণ ও চিকিৎসাঃ
হঠাৎ করে গরুর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ওষুধ প্রয়োগের পরেও পায়খানা নিন্ত্রনে আসে না। ১৫-২০ দিনের বেশি বা দীর্ঘদিন ধরে পায়খানা তরল থাকে। খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এমন অবস্থাকে ডায়রিয়া বলে। এ ধরণের পাতলা পায়খানা হলে দ্রুত চিকিৎসা না করালে গরু দিনদিন শুকিয়ে যায় এবং কংকালসার হয়ে মারাও যেতে পারে।
গরুর ডায়রিয়া জনিত পাতলা পায়খানার চিকিৎসা-
- ১. প্রতিদিন ১ থেকে ২ বার এক প্যাকেট করে এস.আর.ডাইভেট এর সাথে ১ গ্রাম করে পটাসিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট (পটাশ) মিশিয়ে খাওয়াতে হবে।
- ২. প্রতিদিন ২ বার, এক প্যাকেট করে রুচি বর্ধক পাউডার যেমন রুচিমিক্স পাউডার খাওয়াতে হবে।
- ৩. প্রতিদিন ১০০ মি.লি. করে দিনে ১ বার তরল জিংক বা জিংক লিকুইড খাওয়াতে হবে।
- ৪. ইলেক্ট্রোলাইট ১ প্যাকেট ২০ লিটার জল বা পানির সাথে মিশিয়ে পানির পাত্রে রেখে দিতে হবে যাতে পানিশূন্যতা রোধ হয়।
- ৫. Biogut পাওডার - ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১০ গ্রাম করে সকাল বিকাল ২ বার করে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৬. পায়খানা সারার পর নিয়মিত প্রতিদিন ১ টি করে Biolact vet ট্যাবলেট ১৫ দিন খাওয়াতে হবে।
উপরোক্ত ওষুধ গুলো ডায়রিয়া না সারা পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।
গরুর ব্যালানটিডিয়াসিস পাতলা পায়খানাঃ
গরুর পানির পাত্র ও ড্রেনের পানিতে জন্মানো ব্যালানটিডিয়াম কলাই (Balantidium Coli) খাবারের সাথে অতিরিক্ত মাত্রায় অথবা দীর্ঘদিন ধরে গরুর পেটে প্রবেশ করলে পাতলা পায়খানা শুরু হতে পারে। দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরণের পাতলা পায়খানা স্থায়ী হয়ে থাকে। এ ধরণের পাতলা পায়খানা হলুদ রং বিশিষ্ট ও দূর্গন্ধ হয়।
গরুর বিপাকীয় পাতলা পায়খানাঃ
বদহজম বা বিপাকীয় কারণে দীর্ঘদিন ধরে গরুর এ ধরনের পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। এ ধরনের পাতলা পায়খানা সেরে যাওয়ার পর পুনরয় আবার শুরু হয়। এক সপ্তাহ ভালো থাকলে পরের সপ্তাহে আবার শুরু হয়। পাতলা পায়খানা বারবার সারে আর বারবার শুরু হয়। এভাবে একের পর এক চলতে থাকায় চিকিৎসা খরচ বেশি হয়ে পড়ে। খামার মালিক লাভবান হওয়ার বদলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। সাধারণত খাদ্য সঠিক ভাবে হজম না হওয়ায় গরুর এ ধরনের বিপাকীয় পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি-
- ১. রুচি বর্ধক পাউডার যেমন রুচিমিক্স ১ প্যাকেট করে দিনে ১ বার পায়খানা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত খাওয়াতে হবে।
- ২. লিভারটনিক সিরাপ বা লিকুইড যেমন Livaton দিনে ১ বার করে লেবেলে থাকা পরিমাণ অনুযায়ী ১০-১৫ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৩. জিংক সিরাপ বা লিকুইড যেমন ZS vet প্রতিদিন ১ বার ১০০ মি.লি করে খাওয়াতে হবে।
- ৪. Biogut পাওডার - ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য ১০ গ্রাম করে সকাল বিকাল ২ বার করে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে।
- ৫. Glucolyte vet বা Electrolyte বা গবাদিপশুর স্যালাইন - দিনে ২-৩ টা করে খাওয়াতে হবে পায়খানা না কমা পর্যন্ত।
- ৬. পায়খানা সারার পর নিয়মিত প্রতিদিন ১ টি করে Biolact vet ট্যাবলেট ১৫ দিন খাওয়াতে হবে।
গরুর পাতলা পায়খানা হলে সতর্কতাঃ
গরুর পাতলা পায়খানা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত ও জীবাণু ঘটিত হওয়ায় পাতলা পায়খানা সংক্রমক একিটি রোগ। গরুর পাতলা পায়খানা দেখা দেওয়া মাত্র রোগাক্রান্ত গরুকে অন্যান্য গরু থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে নইলে সকল গরুর পাতলা পায়খানা দেখা দিতে পারে। গরুর পাতলা পায়খানা দেখা দিলে গোয়াল বা খামার জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত স্প্রে করতে হবে। গরু ও খামার কে সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে পাতলা পায়খানা সহ নানারকম রোগজীবাণু থেকে গরুকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
উপরোক্ত চিকিৎসা ও প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আশাকরি গরুর সকল প্রকার পাতলা পায়খানা দূর করা সম্ভব হবে। যে কোনো ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো খাওয়ানো উচিত। সুস্থ গরু আর লাভজনক খামার। পাতলা পায়খানা গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই পাতলা পায়খানা দেখা দেওয়া মাত্র অবহেলা না করে দ্রুত রোগাক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাতে হবে।
5 comments
যে কোন ধরনের পাতলা পায়খানাতে কি স্যালাইন, প্রোবায়োটিক,এবং জাইম ব্যাবহার করা যাবে?
সকল ধরনের পাতলা পায়খানায় কি জাইম,প্রোবায়োটিক,সালফাডিন,স্যালাইন ব্যাবহার করা যাবে?
জাইম, প্রবায়োটিক, স্যালাইন সকল ধরনের পাতলা পায়খানায় ব্যবহার করা যায়, তবে সালফাডিন সকল ধরনের পাতলা পায়খানায় ব্যবহার করা গেলেও কাজ নাও করতে পারে, গর্ভবতী গাভীকে সালফা-৩ দেওয়া উত্তম।
1timeschool.com এর পক্ষে,
রোদেলা
গরুর নরম পায়খানা ও খাওয়া পতি রুচি নেই।
গরুর নরম পায়খানা ও খাবারে অরুচির জন্য উপরের চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করুন। আশাকরি কাজ হবে।
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon