করোনা হলে করণীয়
এখানে যা থাকছে---
-
করোনা পজিটিভ হলে করণীয়
- বাচ্চাদের করোনা হলে করণীয়
- গর্ভাবস্থায় করোনা হলে করণীয়
- গর্ভবতী মায়ের করোনা হলে করণীয়
- করোনা ধরা পড়লে যা করতে হবে
করোনা হলে করণীয় |
করোনা ভাইরাস কিঃ
ইংরেজী VIRUS এর পূর্ণরূপ Vital Information Resources Under Siege অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ব্যবস্থাকে অচল করে ফেলে এমন। বর্তমানের বৈশ্বিক মহামারীর জন্য দায়ী করোনা ভাইরাস কে কোভিড-১৯ বা Covid -19 বলা হয়ে থাকে। Covid-19 মূলত Coronavirus disease 2019 এর সংক্ষিপ্ত রূপ। Co = Corona, Vi = Virus, D = Disease এবং 19 = 2019. করোনা ভাইরাস মূলত ভাইরাস জগতের বিশাল এক শক্তিশালী শ্রেণী বা গ্রুপ যে শ্রেণীতে রয়েছে প্রাণী দেহের জন্য মারাত্মক আর ক্ষতিকারক অসংখ্য শক্তিশালী ভাইরাস। ২০১৯ সালের শেষের দিকে করোনা ভাইরাস সর্বপ্রথম পাওয়া যায় বা শনাক্ত হয় চিনের উহান শহরে। এর পর মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
করোনার লক্ষণ কি কিঃ
করোনা পজেটিভ হলে করণীয়ঃ
করোনা হলে বা করোনা হয়েছে সেটা নিশ্চিত হলে আমাদের কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলা উচিত। করোনা হলে নিজেকে করোনা থেকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা করার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের সুস্থ লোকদের মাঝে যাতে করোনা ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত। নিম্নে করোনা পজেটিভ হলে বা শরীরে করোনার লক্ষণ ধরা পড়লে করণীয় গুলোকে সাধারণত দুটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা-
- ১. করোনা হলে যা করা উচিত
- ২. করোনা হলে যা করা উচিত নয়
করোনা হলে যা করা উচিতঃ
করোনা পজেটিভ হলে বা করোনা ধরা পড়লে যা করা উচিত তা নিম্নরূপ-
- ১. নিজেকে আলাদা করে রাখা - করোনা পজেটিভ হলে অর্থাৎ শরীরে করোনা ধরা পড়লে প্রথম কাজ নিজেকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখা। আলাদা ঘরে থাকা। ঘর থেকে সচারচার বের না হওয়া। অন্যদের সাথে কথা বলতে হলে নিজ ঘরে অবস্থান করে কথা বলা বা অধিক দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলা। ইংরেজীতে যাকে 'সেল্ফ আইসোলেশন' বলে।
- ২. নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া- করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর নিজেকে আলাদা করার পরবর্তী কাজ হলো নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা। সরকারি ও বেসরকারী অনেক প্রতিষ্টান আছে যারা করোনার পরীক্ষা করে থাকে। স্ব-শরীরে যেয়ে নমুনা পরীক্ষা করানো যেতে পারে আবার নিজ বাড়ি বা বাসায় প্রতিষ্টানের লোক এনে নমুনা দেওয়া যেতে পারে। খরচ কমাতে চাইলে স্ব-শরীরে যেয়ে নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে।
- ৩. গরম পানি বা জলের ভাপ নেওয়া- করোনা ভাইরাস প্রাথমিক অবস্থায় গাল ও গলায় অবস্থান করে। এর পর ফুসফুসে আক্রমণ করে। তাই গরম পানি করে গরগর করলে বা গরম পানির ভাপ নিলে গলা ব্যথা কমার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া গরম পানির ভাপ ফুসফুসের কোষ কে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
- ৪. লক্ষণ অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ- করোনার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর, করোনা পজেটিভ হোক বা না হোক প্রাথমিক ভাবে ফার্স্টএইড (First Aid) বা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। সাধারণত জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা কামাতে Napa Extra বা Napa Extend বা সমজাতীয় ওষুধ, গ্যাসের সমস্যা হলে Sergel 20mg বা সমজাতীয় ওষুধ। এভাবে যে যে উপসর্গ দেখাদেবে সেই মতো ওষুধ খেতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ্ব নেওয়া উত্তম।
- ৫. পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া- করোনা মোকাবেলা করতে শরীরের Immune System বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রয়োজন পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারফলমূল, মাছ, মাংস এসময় বেশি করে খাওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন খাবার গুলো সহজে হজম হয়।
- ৬. পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ - পানির অপর নাম জীবন। করোনা হলে প্রচুর পানি গ্রহণ করা উচিত। পানি শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। খাদ্যদ্রব্য ও বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। তাই করোনা হলে বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।
- ৭. রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করা- করোনা ভাইরাস ফুসফুসে আক্রমণ করায় ফুসফুসের কার্যক্রম হ্রাস পায় ফলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ঝুকির হার নিরূপণ করা যায়। বাজারে পালস অক্সিমিটার (Pulse Oximetry) পাওয়া যায় যা হৃদপিন্ডের গতি ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপার যন্ত্র। আংগুলে অক্সিমিটার লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ও হৃৎস্পন্দন এর মাত্রা মাপা যায়। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অক্সিমিটারে ৯৫ এর কম দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ৮. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া- বর্তমানে ইন্টারনেট তথা আইসিটি এর কল্যানে ভিডিও কল, অডিও কল তথা মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিমেষে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। করোনা হলে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ঘরে বসেই গ্রহণ করার ব্যবস্থা করতে হবে।
- ৯. করোনা প্রতিহত করার মনোবল তৈরি- করোনাকে মোকাবেলা করতে শারীরিক ক্ষমতার পাশাপাশি অধিক মনোবলের প্রয়োজন। মন ঠিক থাকলে শরীর ঠিক থাকে। ভেঙে পড়লে চলবে না। কারন নিয়ম মেনে চললে করোনাকে প্রতিহত করা কষ্টের কিছু নয়।
- ১০. সংক্রমক রোধক গ্রহণ করে বাইরে যেতে হবে- যদি জরুরী প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয় তবে অবশ্যই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা গ্রহণ করে বাইরে বের হতে হবে। মাক্স, হ্যান্ড গ্লাভস, স্যানিটাইজার ব্যবহার করে তবেই বের হতে হবে। সবসময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কাশি বা থুথু ফেলতে পলেথিন ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ করোনা ছড়াতে পারে এমন কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
কোভিড -১৯ |
করোনা হলে যা কখনো করা উচিত নয়ঃ
করোনা হলে বা করোনার লক্ষণ দেখা দিলে যা কখনো করা উচিত নয় তা নিম্নরূপ-
- ১. অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া- করোনা একটি অতি সংবেদনশীল ভাইরাল অসুখ। বাতাসের সাহায্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাই অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবার ও ওষুধের যোগান পেতে পরিবারে সদস্যদের ঘরের বাইরে তা রেখে যেতে বলতে হবে।
- ২. ভয় ও লজ্জায় নমুনা পরীক্ষা না করানো- অনেকে করোনা কে ভয় পান। আবার করোনা হলে লকে হয়তো খারাপ চোখে দেখবে এই ভয়ে কাওকে বলতে চান না। ডাক্তার দেখাতে এমনকি নমুনা পরীক্ষা করাতে ভয় পান। মূলত পরীক্ষা করালে ঝুকি কম হয় তাই অহেতুক ভয় বা লজ্জা না পেয়ে নমুনা পরীক্ষা করা উচিত।
- ৩. করোনা গোপন করে ঘুরে বেড়ানো- অনেকে করোনা পরীক্ষা না করিয়ে করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ান। এভাবে ঘুরে বেড়ানোর ফলে পরিবার, প্রতিবেশী সহ গ্রাম শহরে করোনা ছড়িয়ে পড়ে এবং করোনা মহামারী রূপ ধারন করে।
- ৪. পরিবারের সকলে একি বাথরুম ও টয়লেট ব্যবহার- পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের টয়লেট ও বাথরুম ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে। করোনা রোগী আছে এমন কারো সাথে বাথরুম বা টয়লেট শেয়ার বা একসাথে ব্যবহার না করাই উত্তম।
- ৫. যথাযথ আইসোলেশন না মানা- যথাযথ সেল্ফ আইসোলেশন (Self-Isolation) না মানায় করোনা ভাইরাস যত্র তত্র ছড়িয়ে পড়তে পারে তাই করোনা পজেটিভ হবার পর কিছুদিন পর পুনরয় নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। যতক্ষণ না করোনা নেগেটিভ আসছে ততোক্ষণ নিজেকে সেল্ফ আইসোলেশনের বাইরে রাখা যাবে না।
- ৬. বাজার ঘাটে যাওয়া- অনেকের বাজার ঘাটে যাওয়া নেশার মতো। করোনা ধরা পড়লে এসকল খারাপ অভ্যাস অবশ্যই ত্যাগ করতে হবে এবং বাজার ঘাটে যাওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
- ৭. চিকিৎসা না নেওয়া- চিকিৎসা না নিয়ে অনেকে সৃষ্টি কর্তার উপর সব ছেড়ে দেন। কিন্তু সৃষ্টি কর্তা বিপদে বা কোনো রোগ শোগে বসে থাকতে বলেন নি। রোগ ও বিপদ থেকে মুক্ত হতে অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। আর করোনাকে ভয় ঠিক নয়। সচেতন থাকলে অতি সহজেই করোনা মুক্ত হওয়া সম্ভব।
শিশুদের বা বাচ্চাদের করোনা হলে করণীয়ঃ
শিশুদের ইমুউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধদের থেকে ভালো হলেও অনুন্নত দেশের অধিকাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। বাচ্চাদের করোনা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো চিকিৎসা চালাতে হবে। করোনা প্রটেক্ট দেওয়ার মতো নানারকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেমন- মাক্স, গ্লাভস, কোট, চশমা ব্যবহার করে বাচ্চার দেখভাল করতে হবে। যথাসম্ভব আদরে ও যত্নে শিশুকে করোনা মুক্ত করতে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে।
গর্ভাবস্থায় করোনা হলে করণীয়ঃ
গর্ভবতী মায়ের করোনা হলে গর্ভের বাচ্চার করোনা হবে এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায় নি। তবে গর্ভকালীন গর্ভের বাচ্চার বাড়তি যত্ম নিতে মা কে যত্নবান হতে হয়। করোনা কালীন মা কে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত চেকাপ করানোর পাশা পাশি শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি যাতে না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বৃদ্ধ ও অতি বয়ষ্কদের করোনা হলে করণীয়ঃ
করোনা হলে বাড়তি করণীয়ঃ
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon