করোনা (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে সচেতন নাগরিকের করণীয়
প্রবন্ধ - রচনা - পত্র - এসাইনমেন্ট
কোভিড-১৯ সচেতনতা |
[এই প্রবন্ধটি ইংরেজীতে পেতে এখানে ক্লিক করুন>>>]
করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বের এক আতংকের নাম। করোনাভাইরাস রোগ (সিওভিড -১৯) একটি সংক্রামক রোগ যা সদ্য আবিষ্কৃত করোন ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রন ও প্রতিহত করতে এখনো পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ঔষুধ আবিষ্কৃত হয় নি। ফলে জন সচেতনতা ছাড়া করোনা মহামারী রূপ নিতে বাধ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এদেশে দ্রুত করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি ব্যপক ও বিস্তৃত।
সাধারণত, COVID-19 ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত বেশিরভাগ মানুষ হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা নিয়ে ভোগে এবং বিশেষ চিকিত্সার প্রয়োজন ছাড়াই সুস্থ হয়ে উঠে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত বয়ষ্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঝুকি বেশি থাকে। এছাড়া কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা ব্যপক।
বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনের জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রয়োজন। মাক্স পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রন সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগন অশিক্ষিত ও অসচেতন। করোনার ঝুকি না ভেবে এরা পাবলিক বাসে ভিড় করে। রেল, ফেরি, লঞ্চ এর একি অবস্থা। ধর্মিও আচার ব্যবহার সম্পর্কে অজ্ঞতার ফলে, প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ছাড়াই যত্রতত্র বের হচ্ছে। এই অতি মহামারীর মাঝে নানারক ধর্মিও ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং উৎসাহের সাথে অংশগ্রহণ করছে। পাবলিক ট্রানেসপোর্ট ও পাবলিক প্লেসে জনগণের এমন খাপছাড়া আচারন বাংলাদেশে করোনাভাইরাস দ্রুত শহর থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে।
[করোনা পজিটিভ হলে করণীয়, ক্লিক>>>]
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ প্রতিহত করতে সরকারের পাশাপাশি নানারকম দেশি বিদেশি সংগঠন প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রনে সরকার 'লকডাউন' এর মতো নানারকম কর্মসূচী গ্রহণ করছে। কিন্তু বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী দারিদ্র হওয়ায় কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছে। অসচেতনত এই জনগোষ্ঠী লকডাউন কে উপেক্ষা করার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব মেনে না চলায় বাংলাদেশে করোনা দিন দিন মহামারী রূপ নিচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রায় সারাবছরই নানারকম ধর্মীয় ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। ঈদ, পূজা, বড়দিন এর মতো নানারকম ধর্মিও অনুষ্ঠানে লোকজন গাদাগাদি করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করে। হ্যান্ডশেক ও কোলাকুলি এদেশের অন্যতম আচার ব্যবহার। এ দুইটি আচারন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারোন। নানারকম সামাজিক ফেস্টিভেলে যানবাহনে গাদাগাদি করে চলাচল করায় করোনাভাইরাস নিমেষে ছড়িয়ে পড়ছে। অসচেতন জনগণ মাক্স, স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব না মেনেই নানারকম ফেস্টিভালে যাতায়ত করে যা খুবি হতাশাজনক। নিয়ম না মানা অশিক্ষিত ও অসচেতন জনগনের অন্যতম বদঅভ্যাস।
বাংলাদেশের জনগনের সামাজিক দূরত্ব না মানার অন্যতম কারন এদেশের ঘনবসতিপূর্ণ জনসংখ্যা। ফলে, ইচ্ছা থাকলেও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা অনেকটা অসম্ভব। ধর্মীয় জ্ঞান সীমিত থাকায় করোনার মতো মহামারী কে অনেকে অবহেলা করছে। সচেতনতার অভাবে অধিকাংশ জনগণ জনসমাগম এড়িয়ে চলছে না, সঠিক ভাবে মাক্স পরিধান করছে না, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে না। অন্যদিকে, দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো মজবুত না হওয়াই সরকার কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ ও লকডাউনের মতো কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারছে না।
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যাচ্ছে । করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পরেও এর ক্ষতিকর প্রভাব বহন করছে অনেকে। করোনার প্রকৃত চিকিৎসা এখনো আবিষ্কার হয় নি। অপরদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ন্ত্রনের ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি হওয়াই দারিদ্র জনগণের করোনা মোকাবেলা প্রায় অসম্ভব। এতো ভয়াবহতা শর্তেও এদেশের জনগণ অসচেতন। বাংলাদেশের জনগণ সচেতন না হলে করোনা পরিস্থিতি দ্রুত ভয়াবহ রূপ নেবে। চা বা কফিশপে অকারণে আড্ডা দেওয়ার মতো আমাদের বাজে আচারন পরিবর্তন করা না গেলে করোনা মোকাবেলা অসম্ভব হয়ে দাড়াবে।
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনগণের আচারনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে করোনাভাইরাস কে প্রতিহত করা সম্ভব। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মহামারী মোকাবেলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারি। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সোশাল নেটওয়ার্কে সচেতনতামূলক পোস্ট শেয়ারের পাশাপাশি দেওয়াল পোস্টারিং ও মাইকিং এর মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে পারি। মাক্স ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের উপকারিতা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার উপকারিতা সম্পর্কে প্রচার প্রচারনা করতে পারি। 'মাস্ক পরুন নইলে মরুন', 'নো মাক্স নো সার্ভিস', এর মতো শতর্ক মূলক উক্তি দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন লিখে সচেতনতা বাড়াতে পারি। সরকারের টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়নে জনগনকে করোনা টিকা গ্রহণে উৎসাহ প্রদান আমাদের অন্য আরেকটি দ্বায়িত্ব। আমাদের সচেতন হওয়া উচিত। সচেতন না হলে আমাদের অকাল মৃত্যু অবধারিত।
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon