বুধবার

বিরিয়ানি রান্নার - আধুনিক রেসিপি

ঝরঝরে ও সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্নার উপায়


এখানে যা থাকছে---

  • আধুনিক উপায়ে বিরিয়ানি রান্না
  • বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি
  • চিকেন বা মুরগির মাংসের বিরিয়ানি
  • বিফ বা গরুর মাংসের বিরিয়ানি
  • মাটন বা খাসির মাংসের বিরিয়ানি
  • ঝরঝরে ও সুস্বাদু বিরিয়ানি

আধুনিক উপায়ে বিরিয়ানি রান্না, বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি, মুরগির মাংসের বিরিয়ানি, গরুর মাংসের বিরিয়ানি, খাসির মাংসের বিরিয়ানি, ঝরঝরে ও সুস্বাদু বিরিয়ানি
বিরিয়ানি রান্নার সুস্বাদু রেসিপি


বাঙ্গালি বরাবরি ভোজন রসিক। হাজীর বিরিয়ানি, কলকাতা বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি সহ নানান পদের বিরিয়ানি রান্নার উদ্ভাবক রসিক প্রিয় বাঙ্গালি। অন্য দিকে ঘরোয়া বিরিয়ানি রান্নার স্বাদ যদি রেস্টুরেন্ট এর বিরিয়ানি কে হার মানায়, তাহলেতো কথাই নেই। তাই ঘরে বসেই সুস্বাদু আর ভূরিভোজন কে এক অন্যতম আধুনিক স্বাদ দিতে নিয়ে এলাম বিরিয়ানি রান্নার নতুন এক পদ্ধতি। আশা ও বিশ্বাস বাসায় রান্না করে পাবেন নতুন এক আধুনিক স্বাদ আর নতুনত্বের আত্মতৃপ্তি।



বিরিয়ানির উৎপত্তিঃ

আঞ্চলিক ভাষায় বিরিয়ানি কে বিরেনি বা বিরানি বলে। বিরিয়ানি রেসিপি মূলত দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সমাজ উৎপত্তি ঘটিয়েছে। ইংরেজিতে বিরিয়ানি কে Biryani বা Biriani বলে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ তথা ভারতবর্ষ বা ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশ গুলোর জনপ্রিয় খাবার বা রেসিপি হিসাবে বিরিয়ানি খুবি জনপ্রিয়।



বিরিয়ানির প্রকারঃ

বিরিয়ানি রান্নার রয়েছে নানা পদ্ধতি আর বাহারি রেসিপি। প্রকরণের দিক দিয়ে দেখতে গেলে বিরিয়ানি রান্নার পদ্ধতি ও উপকরণগত পার্থক্য কেই প্রাধান্য দিতে হয়। স্থানগত দিক দিয়ে প্রকরণ করতে গেলে ঢাকাইয়া বিরিয়ানি, কলকাতা বিরিয়ানি, কাচ্চি বিরিয়ানি, হাজীর বিরিয়ানি, ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিরিয়ানি, রেস্টুরেন্ট এর বিরিয়ানি, বাঙালী বিরিয়ানি, অবাঙালী বিরিয়ানি অন্যতম। আবার সাদা বিরিয়ানি, ঝরঝরে বিরিয়ানি, রেডিমেড বিরিয়ানি মসলার বিরিয়ানি এমন নানান ভাগে বিরিয়ানি কে ভাগ করা যেতে পারে। বিরিয়ানি কে উপকরণগত দিক দিয়ে ভাগ করতে গেলে মটন বা মাটন বা খাসির মাংসের বিরিয়ানি, বিফ বা গরুর মাংসের বিরিয়ানি, চিকেন বা মুরগির মাংসের বিরিয়ানি এমন নানান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। অনেকে চিকেন বিরিয়ানি মসলা বা নানারকম রেডিমেড বিরিয়ানি মসলা সহকারে বিরিয়ানি রান্না করতে পছন্দ করেন। কেওবা পছন্দ করেন ঘরোয়া মসলা ব্যবহার করে বিরিয়ানি রান্না করতে। ঈদে যেমন রমজানের ঈদ অথবা কোরবানি ঈদে নানারকম পদের পাশাপাশি বিরিয়ানি এক জনপ্রিয় পদ। পুজা পর্বণেও বিরিয়ানির জুড়ি মেলা ভার। তাই বিরিয়ানি দেশ কাল রুচি ভেদে নানান প্রকারের হতে পারে।



বিরিয়ানি রান্নার আজকের রেসিপিঃ

আধুনিক উপায়ে বিরিয়ানি রান্না, বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি, মুরগির মাংসের বিরিয়ানি, গরুর মাংসের বিরিয়ানি, খাসির মাংসের বিরিয়ানি, ঝরঝরে ও সুস্বাদু বিরিয়ানি
বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি


বিরিয়ানি রান্নার নিয়ম রয়েছে অসংখ্য। ঝরঝরে বিরিয়ানি আর সুস্বাদু বিরিয়ানি সকলেই প্রত্যাশা করে। মেজবানি বা বিয়ের অনুষ্ঠান বা ঘরোয়া ভাবে একি পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্না করার একটি আধুনিক ও সুস্বাদু পদ্ধতি বা নিয়ম রয়েছে। যে কোন মাংস সহকারে এ পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্না সম্ভব, আবার খেতেও খুব সুস্বাদু। এ পদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এটি আধুনিক পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম। আমাদের আজকের রান্না ঘরে থাকছে সহজ, ঝরঝরে, সুস্বাদু ও আধুনিক পদ্ধতিতে বিরিয়ানি রান্নার রেসিপি।



বিরিয়ানি রান্নার উপকরণঃ

যে কোন মাংস, লবণ, পিয়াজ, তেল, আদা বাটা, ধনে গুড়া, আলু বোখারা (না হলেও চলবে), পেয়াজ বাটা, ঘি, জিরা বাটা, এলাচ, লবঙ্গ, রসুন বাটা, মরিচের গুড়া, বিরিয়ানি মসলা (না হলেও চলবে তবে এর পরিবর্তে পোস্তা বাটা, জয়ত্রি বাটা ও জয় ফল বাটা ব্যবহার করতে হবে), দারুচিনি, তেজপাতা, চিলি সস (না হলেও চলবে), টমেট সস (না হলেও চলবে), দৈ, পানি, কাচা মরিচ, পোলাও এর চাল বা সুগন্ধি চাল (চিকন বা বাসমতী চাউল হলেও চলবে)।



বিরিয়ানি রান্নার উপকরণ গুলোর আনুপাতিক পরিমাণঃ

মাংস - ২ কেজি, লবণ - স্বাদ মতো, পেয়াজ বাটা - ১ কাপ , গোল করে কাটা পিয়াজ কুচি- ১ কাপ, ধনে গুড়া - ১ চা চামচ, তেল - ২৫০ গ্রাম বা এর বেশি, এলাচ - ৫-৭ টি, লবঙ্গ - ৫ টি, আদা বাটা - ২ চা চামচ, জিরা বাটা - ২ চা চামচ, রসুন বাটা - ২ চা চামচ, মরিচের গুড়া - ১ চা চামচ , ঘি - ২ চা চামচ, বিরিয়ানি মসলা - ২ টেবিল চামচ (না হলেও চলবে তবে এর পরিবর্তে পোস্তা বাটা, অল্প পরিমাণ জয়ত্রি বাটা ও ১ টি জয় ফল বাটা পরিমাণ মতো মিশিয়ে মোট ১ টেবিল চামচ ব্যবহার করতে হবে), আলু বোখারা ৪-৫ টি (না হলেও চলবে), দারুচিনি - ৮-১০ খন্ড, তেজপাতা - ৫ টি, চিলি সস - ২ চা চামচ (না হলেও চলবে), টমেট সস - ২ চা চামচ (না হলেও চলবে), দৈ - ৫০ গ্রাম, পানি - পরিমাণ মত, আস্ত কাচা মরিচ - ৪-৫ টি, চাল - ১ কেজি।



বিরিয়ানি রান্নার নিয়ম বা পদ্ধতিঃ

আসুন এবার রান্না শুরু করা যাক,

  • ১. প্রথমে মাংস মাঝারি সাইজে কেটে লবন দিয়ে আধা ঘন্টা রেখে দিন।
  • ২. কড়াইতে পিয়াজ কুচি গোল গোল করে কেটে বাদামি করে ভেজে তুলে রাখুন।
  • ৩. কড়াইতে তেল দিয়ে মাংস ৪-৫ মিনিট অল্প আচে ভেজে তুলে রাখুন।
  • ৪. এবার পরিমান মত তেল দিয়ে কড়াইতে আদা বাটা, পিয়াজ বাটা, জিরা বাটা, রসুন বাটা, মরিচের, এলাচ - ৫-৭ টি, লবঙ্গ - ৫ টি  গুড়া, ধনে গুড়া, লবণ ও বিরিয়ানি মসলা বা এর পরিবর্তে নেওয়া মসলা (পোস্তা বাটা, জয়ত্রি ও জয় ফল বাটা) দিয়ে কিছু সময় নাড়ুন।
  • ৫. এবার ভেজে রাখা মাংস মসলার মাঝে দিয়ে কিছু সময় কষিয়ে নিন এবং আস্ত তেজ পাতা, ভাংগা দারুচিনি এই সময় দিতে পারেন।
  • ৬. এর পর চিলি সস ও টমেট সস দিতে পারেন এবং পরিমাণ মতো দৈ দিয়ে মাংস কষাতে থাকুন।
  • ৭. মাংস কষানো হয়ে গেলে অল্প পানি দিয়ে সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রাধুন, পানি দেওয়ার সময় লবণে হয়েছে কিনা দেখে নিন।
  • ৮. ঢাকনা ঢেকে রান্না করবেন এবং মাঝে মাঝে দেখবেন মাংস সেদ্ধ হয়েছে কিনা, মনে রাখবেন রান্না এমন ভাবে করবেন যেন শেষ পর্যন্ত মাংসে বেশি পানি না থাকে, মানে গামাহ গামাহ বা গাঢ় গাঢ় থাকে। মাংস নামানোর ১০ মিনিট আগে আস্ত কাচা মরিচ এবং ভেজে রাখা পেয়াজ ও আলু বোখারা মাংসে দিয়ে দিন।
  • ৯. চুলা থেকে মাংস নামিয়ে রাখুন এবং অন্য একটি হাড়িতে বা পাত্রে পানি দিয়ে গরম করুন, এবং কিছু পরিমাণ গরম পানি তুলে অন্য পাত্রে রাখুন।
  • ১০. হাড়িতে থাকা গরম পানির মাঝে চাউল দিন এবং মনে রাখবেন চাউলের উপর যেন এক বিঘাতের বেশি পানি থাকে।
  • ১১. চাউল এমন ভাবে রান্না করুন যেন সবসময় ঢিল ঢালা পানি থাকে, পানি মিশানো চালে সামান্য লবণ দিয়ে দিন এবং বেশি সেদ্ধ না হয়ে যায় সে দিকে খেয়াল রাখুন অর্থাৎ খুবি অল্প পরি মানে ভাতে মাজ থাকা অবস্থায় নামিয়ে ফেলুন।
  • ১২. কোন ছাকনি বা চালনীর উপর পাতলা কাপড় বিছিয়ে হাড়ির পুরা চাউল ঢেলে দিন এবং ঢালা চাউলে আগে থেকে তুলে রাখা গরম পানি ঢেলে দিন এবং পানি ঝরিয়ে নিন।
  • ১৩. বেশি সময় দেরি না করে পানি ঝরলেই দ্রুত গরম গরম ভাত সসপেন বা হাড়িতে কিছু পরিমাণে অল্প অল্প করে ঢালুন এবং তার উপর রান্না করা মাংস বিছিয়ে দিন, আবার ভাত ঢালুন আবার মাংস বিছান এভাবে পরতা পরতা বা ভাজে ভাজে ভাত ও মাংস ঢালুন।
  • ১৪. সব ভাত ও মাংস হাড়িতে ঢালা হয়ে গেলে ভাতের উপর ঘি ছড়িয়ে দিন।
  • ১৫. খুনতি বা নাউড়ি বা নাড়ানি দিয়ে ভাত মিশ্রিত মাংস নাড়ুন যেন একে অপরের সাথে মিশে যায় তবে খেয়াল রাখবেন যেন ভাত কেটে বা চটকে না যায়।
  • ১৬. এবার হাড়িতে বা সসপেনে ঢাকনা দিয়ে চুলার উপর রাখুন তবে চুলায় তাপ থাকলেও যেন আগুন না জ্বলে, চুলা থেকে কিছু পরিমাণে কয়লা হাড়ি বা সসপেনের ঢাকনার উপর রাখুন এবং ঢাকনার উপরে ভারি কিছু চাপা দিয়ে রাখুন যেন ধোয়া বের হতে না পারে।
  • ১৭. হাড়ির ঢাকনা না খুলে এভাবে আধা ঘন্টা রাখুন তবে খেয়াল রাখবেন এই সময়ে চুলার তাপ যেন কোন ক্রমেই বেশি না থাকে এবং আগুন জ্বলে না ওঠে।
  • ১৮. সব শেষে পাত্রের ঢাকনা খুলে সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করুন আধুনিক পদ্ধতিতে রান্না করা সুস্বাদু ও মজাদার ঝর ঝরে বিরিয়ানি। আর যে কোন সালাদ সহকারে গরম গরম খাওয়া শুরু করুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি আধুনিক মুখে জল আনা সুগন্ধি বিরিয়ানি।



এমন স্বাদের ও মজাদার সব রান্না পেতে আমাদের সাথেই থাকুন, আপনার পছন্দ বা মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানালে খুশি হব। আপনার নিজের তৈরি কোন রান্না বা রেসিপি থাকলে রেসিপির ছবি ও আপনার ছবি সহ আমাদের লিখে জানাতে পারেন। আমরা আপনার নাম ও ছবি সহ রেসিপি আমাদের সাইটে প্রকাশ করবো। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করে ই-মেইলে ম্যাসেজ করুন




আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।


কে-মাহমুদ

০৯-১০-২০১৯

1 comments

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon