শুক্রবার

গরু মোটাতাজাকরণ - আধুনিক পদ্ধতি

আধুনিক পদ্ধতিতে গরু দ্রুত মোটাতাজা করার উপায়


এখানে যা থাকছে--

  • গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক পদ্ধতি
  • গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম
  • ইউরিয়া বা ইউএমএস এর মাধ্যমে গরুর দ্রুত মাংস বৃদ্ধি
  • লাভজনক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ


গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক পদ্ধতি, গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম, ইউরিয়া বা ইউএমএস এর মাধ্যমে গরুর দ্রুত মাংস বৃদ্ধি, লাভজনক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ
গরু মোটাতাজাকরণ


মাত্র ৩ মাসে গরু মোটাতাজাকরণ (Cow Fattening) পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে বেকারত্ব দূরকরণে অনন্য ভূমিকা পালন করতে পারে। গরু হৃষ্ট পুষ্ট করে বানিজ্যিক ভাবে বিক্রি একটি আত্মকর্মসংস্থান মূলক লাভজনক প্রক্রিয়া। আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করণ পদ্ধতির মাধ্যমে দেশের বেকার যুবকেরা আত্মকর্মসংস্থান করে নিজেকে খুব সহজেই প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এর জন্য শুধু প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও সঠিক ধারনার্জন। অনেকে গরু মোটাতাজা করতে মোটাতাজাকরণ ইনজেকশন হিসেবে বিভিন্ন হরমন ও স্টয়েড ইনজেকশন ব্যবহার করে যা মানব দেহের জন্য খুবি ক্ষতিকর। লাভজনক উপায়ে কোনো প্রকার হরমন ও স্ট্রয়েড বা ক্ষতিকারক ঔষুধ ব্যবহার না করে উন্নত আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি, কৌশল বা উপায় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা।



মোটাতাজা করণের জন্য গরু বাছাইঃ

সাধারন্ত চামড়া ঢিলা ঢালা, দূর্বল তবে রোগাক্রান্ত নয় খাদ্যের অভাব জনিত অপুষ্ট গরু, হাড় মোটা, চওড়া পিঠ যুক্ত ১.৫-২ বৎসরের গরু মোটা তাজা করণের জন্য উপযুক্ত। দুই থেকে চার দাতের গরু হলেও চলবে। ধামড়া গরু দ্রুত মোটা হয়, তবে কোরবানি সামনে রেখে এড়ে বা ষাড় গরু মোটাতাজা করণ করা ভালো, গর্ভবতী গাভীকে কখনোই মোটাতাজা করণের উদ্যোগ নেওয়া চলবে না। অন্য দিকে রোগাক্রান্ত গরু মোটাতাজা করার জন্যে বাছাই করা যাবে না। দেশি গরু মোটাতাজা করণের জন্যে বাছাই না করে সংকর জাতের গরু হলে ভালো হয়। সংকর জাতের শাহীওয়াল, ব্রাহমা বা ফ্রিজিয়ান গরু মোটাতাজা করার জন্য উত্তম।



১ম কাজ- 

গরুর ক্ষত দূর ও রোগ মুক্ত করণঃ

মোটা তাজা করণের জন্যে গরু কেনার পর প্রথম কাজ গরুর গায়ে কোনো প্রকার ক্ষত থাকলে তা সারিয়ে তোলা। ক্ষত সারতে নানা রকম মলম লাগানো যেতে পারে এবং ক্ষতে যাতে মাছি বসতে না পারে বা গরু যাতে চাটাচাটি না করতে পারে তার জন্য আলকাতরা বা এমন কোনো তরল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ক্ষত দ্রুত সারতে এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন যেমন পেনিসিলিন দেওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে পাতলা পায়খানা ও আমশা থাকলে মেট্রানিডাজল ভেট ট্যাবলেট ও সালফাডিন ভেট ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। প্রতিটি ঔষুধ ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যবহার করা উচিৎ। অন্যান্য রোগের জন্যেও ডাক্তারের পরামর্শ মতে চিকিৎসা করা উচিৎ।



২য় কাজ - 

গরুর পরজীবী দমনঃ

মোটাতাজা করতে পরজীবী নিধন অত্যাবশ্যক। গরুর গায়ে উকুন, আঠালি বা কোন পরজীবি থাকলে গরুর নাক চোখ, কাপড় দিয়ে বেধে মুখে ঠুসি লাগিয়ে দোকান থেকে পরজীবি নাশক কিনে তা দিয়ে গোসল করিয়ে বা স্প্রে করে উকুন বা পরজীবি মুক্ত করতে হবে। মুখ চোখ বেধে গোসল করাতে হবে যাতে গরু ওষুধ মিশ্রিত পানি খেয়ে না ফেলে। এবং শরীর শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে গোসল করিয়ে তার পর মুখ থেকে ঠুসি খুলতে হবে। এই ঔষুধ বিষ হওয়ায় ক্ষত থাকলে ক্ষত স্থানে ঔষুধ যাতে না লাগে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পরজীবী নাশক হিসেবে এনোসটোল অথবা নিউসিডল পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। ১০ লিটার পানিতে ২.৫ বা আড়ায় চা চামচ মিশাতে হবে এবং এই পানি দিয়ে ক্ষত ও মুখ চোখ  বাদে গরুকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে নিতে হবে।



৩য় কাজ- 

মোটাতাজা করতে গরুকে কৃমি মুক্ত করণঃ

কৃমি থাকলে তা গরুর খাবারে ভাগ বসায়। গরু দ্রুত মোটা করতে অবশ্যই কৃমি মুক্ত করতে হবে। মোটাতাজা করণের জন্যে নির্বাচিত গরুকে তার দৈহিক ওজন অনুযায়ী কলিজা ও পাকস্থলীর কৃমি ধ্বংসের জন্য কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে এবং কৃমিনাশক সকালে খালি পেটে খাওয়াতে হবে। কিছু কিছু কৃমি নাশক খাওয়ানোর পর প্রচুর পানি খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায় তবে কোনো ক্রমেই কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর কমপক্ষে ২ ঘন্টার মধ্য পানি ছাড়া কোন প্রকার খাবার দেওয়া যাবে না। প্রতি ৭৫ কেজি ওজনের জন্যে একটি রেনাডেক্স ভেট ট্যাবলেট খাওয়ানো যেতে পারে। মনে রাখতে হবে কৃমির ট্যাবলেট মাত্রার বেশি খাওয়ালে সমস্যা নেই তবে কম খাওয়ালে কাজে আসবে না। গোবর পরীক্ষা করে দেখতে হবে কৃমির ডিম পাওয়া যায় কিনা, পাওয়া যাক বা না যাক প্রথম ডোজের পর পুনরায় কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। প্রথম ডোজ ক্রিমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর ৭ দিন পর পুনরয় আরেক ডোজ কৃমির ট্যাবলেট না খাইয়ে ফিতা কৃমি নিধনের জন্যে  ইনজেকশন ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ২য় ডোজ হিসেবে ২-৩ সিসি টোডাক্স ইনজেকশন বা ফিতা ক্রিমির ইনজেকশন প্রথম ডোজ ক্রিমির ট্যাবলেট খাওয়ার ৭ দিন পর দিতে হবে। তবে ২য় ডোজ হিসেবে ইনজেকশন না দিয়ে রেনাডেক্স ভেট খাওয়ালেও চলবে।



৪র্থ কাজ- 

গরুকে লিভার টনিক ও রুচি বর্ধক খাওয়ানোঃ

প্রথম ডোজ কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর পর অর্থাৎ পরজীবি মুক্ত ও কৃমিনাশক খাওয়ানোর পর ৭ দিন স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে এবং ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরের দিন থেকে পরপর ৫ দিন লিভার সুরক্ষার জন্য ওষুধের দোকান থেকে এক ফাইল লিভার টনিক কিনে খাওয়াতে হবে। খাবারে অরুচি হলে সাত দিন দোকান থেকে রুচি মিক্স কিনে খাওয়াতে হবে। ২য় ডোজ কৃমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর পরেও একি নিয়মে ৩-৫ দিন লিভার টনিক খাওয়াতে হবে। বাজারে অনেক প্রকার লিভার টনিক পাওয়া যায়, যে কোন একটি নিলেই হবে। লিভার টনিক খাওয়ালে গরুর লিভার সুস্থ হয়ে ওঠে ফলে গরুর খাদ্য প্রক্রিয়া সঠিক হয় এবং মাংস দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে গরু দ্রুত মোটা হয়।



৫ম কাজ- 

গরুকে টিকা প্রদানঃ

গরুর রোগ ও মৃত্যু ঝুকি মোকাবেলাই গরু বাছাই বা কেনার পর কৃমি মুক্তকরন এর ঠিক পর পর তড়কা ও খুরারোগ সহ কয়েকটি রোগের টিকা দেওয়া যেতে পারে। তড়কা ও খুরা রোগের টিকা ঝুকি মোকাবেলায় খুবি গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।



৬ষ্ঠ কাজ- 

মোটাতাজা করতে গরুকে উন্নত দানাদার খাদ্য প্রদানঃ

প্রথম ডোজ ক্রিমির ট্যাবলেট খাওয়ানোর ৮ তম দিন থেকে গরুকে স্বাভাবিক খাবারের সাথে অল্প পরিমানে উন্নত খাবার দিতে হবে। উন্নত খাবার বলতে গমের ভূষি, ডাউল ভাংগা, চাউলের কুড়া,  সয়ামিল, খৈল, লবন ইত্যাদির মিশ্রন কে বোঝানো হয়েছে তবে বাজারে অনেক কম্পান্নির রেডিমিক্স উন্নত মানের গরুর দানাদার খাদ্য পাওয়া যাই সেটাও খাওয়ানো যেতে পারে। খাবারের সাথে গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। দানাদার খাদ্য এক পোয়া থেকে খাওয়ানো শুরু করে সাত দিনের মাঝে ১ কেজি করে খাওয়ানো শুরু করতে হবে। এবং আস্তে আস্তে তা বাড়িয়ে এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেনো গরু পাতলা পায়খানা না করে। পায়খানা নরম হলে দানাদার খাবারের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমিয়ে দিতে হবে। দানাদার খাদ্য সকাল বিকাল ভাগ করে ২ বারে খাওয়াতে হবে। ১৫০-২০০ কেজি ওজনের একটি গরুকে দিনে ৩-৪ কেজি দানাদার খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে। দানাদার খাদ্যের সাথে লবণ, ডিসিপি বা ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ও মিনারেল প্রমিক্স অবশ্যই মিশিয়ে মোটা তাজা করণ গরুকে খাওয়াতে হবে। অন্যদিকে দুপুরে গরুকে পরিমাণ মতো খুদের জাও খাওয়ানো যেতে পারে। নিম্নে মোটা তাজা করণের জন্যে গরুর দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ বা তালিকা তুলে ধরা হলো-

  • ১. তিলের খৈল- ৪ কেজি পরিমাণ
  • ২. কুড়া- ৪ কেজি পরিমাণ
  • ৩. গমের ভূষি- ৪ কেজি পরিমাণ
  • ৪. ডালের ভূষি - ৪ কেজি পরিমাণ


অথবা

  • ১. সয়ামিল- ৩ কেজি পরিমাণ
  • ২. ডালের ভূষি- ২ কেজি পরিমাণ
  • ৩. কুড়া- ২ কেজি পরিমাণ
  • ৪. গমের ভূষি- ৩ কেজি পরিমাণ 



৭ম কাজ-

গরুকে পানি ও খাদ্য খাওয়ানোর নিয়মঃ

গরুকে গুড়, লবন ও কুড়া যোগে পানি না খাইয়ে ফ্রি চুজে বা ইচ্ছা মতো পানি খেতে দিতে হবে। একটি পাত্রে সবসময় পরিষ্কার সাদা পানি রেখে দিতে হবে যাতে গরু ইচ্ছা মতো পানি খেতে পারে। অপর দিকে খড় বা পল ও ঘাস গরুকে দিনে ২-৩ বার দিতে হবে এবং দানাদার খাদ্য সকাল বিকাল ২ বার দিতে হবে। দুপুরে খুদের জাও দেওয়া যেতে পারে। গরুকে সবসময় না খাইয়ে জাবর কাটার টাইম বা বিশ্রাম দিতে হবে। সন্ধ্যা ৭ টার পর গরুকে কোনো খাবার না দেওয়াই উত্তম। মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীতে ফ্রি চুজ পানির ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।



৮ম কাজ- 

দ্রুত মোটাতাজা করতে গরুকে ভিটামিন ও মিনারেল প্রদানঃ

সঠিক মাত্রায় খাদ্য উপাদান নিশ্চিৎ করে গরু মোটাতাজা করতে ভিটামিন মিনারেল ও খনিজের ভূমিকা ব্যাপক। ২য় ডোজ কৃমি মুক্ত করণের ৩ দিন পর থেকে অর্থাৎ ১০ম দিনে ১০ মিলি পরিমান ক্যাটাফস জাতীয় ইঞ্জেকশন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে। এই সময় হেমাটপিন বিএস ইনজেকশন ১০ মিলি প্রয়োগ করলে দ্রুত মাংস বৃদ্ধি পায়। মোটাতাজা করণের জন্যে গরুকে প্রতি সপ্তাহে ১-২ টি করে ক্যাটাফস ইনজেকশন প্রয়োগ করলে মোটাতাজা করণ দ্রুত হয়। এছাড়া বাজারে ডিবি প্লাস বা ডিবি গোল্ড বা অনেক নামে ভিটামিন মিনারেল প্রমিক্স পাওয়া যায় যা পরিমিত মাত্রায় দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। সেই সাথে ক্যালসিয়াম সিরাপ বা ক্যালসিয়াম পাউডার বা ডিসিপি দানাদার খাদ্যে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। ১৫ তম দিনে ১০ মিলি ভিটামিন এডিই ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর এডিই ইনজেকশন দিতে হবে। এডিই ইনজেকশন দিতে সমস্যা হলে সিরাপ আকারে এডিই পাওয়া যায় যা প্রতি দিন দানাদার খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। অন্য দিকে গরুকে ১৫ তম দিন থেকে প্রতি ৩ দিন অন্তর ১০ মিলি পরিমাণ জিংক সিরাপ খাওয়াতে হবে। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ২ টি করে প্রবায়োটিক প্লাস ভেট ট্যাবলেট মোটাতাজা করণ তরান্বিত করতে ও হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে  গরুকে খাওয়াতে হবে। এছাড়া মাঝে মাঝে গ্যাস দূর ও খাদ্য হজমের জন্যে জাইমো ভেট পাউডার খাওয়ালে গ্যাস জনিত সমস্যা অনেকটা দূর হবে। এছাড়া খাবারের সাথে অল্প পরিমাণে খাবার সোডা মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। নিচে গরুর খাদ্য তালিকা ও ভিটামিন ও ইনজেকশন প্রয়োগের পদ্ধতি চার্ট আকারে তুলে ধরা হলো-

  • ১. ১৫ তম দিন থেকে প্রথম পর্যায়ে ১ থেকে ১.৫ লিটার পানির মাঝে ২-৩ মুটো গুড় বা চিটাগুড় অর্থাৎ ২০০-২৫০ গ্রাম চিটাগুড় দিয়ে তার মাঝে এক চা চামচ  পরিমাণ ইউরিয়া সার দিয়ে গুলিয়ে শুকনা ছোট করে কাটা ৪ কেজি খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এভাবে প্রতি দিন খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন দুইবার ইউরিয়া মিশ্রিত খড় বা ইউএমএস খাওয়াতে হবে। এটিই গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম গুলোর মধ্য উত্তম পদ্ধতি। এই সময় ১৫০-২০০ কেজি ওজনের একটি গরুকে কমপক্ষে ৪ কেজি খড় ও ৫ কেজি ঘাস খাওয়াতে হবে। ঘাসের অভাবে গরুর  চাহিদা মতো সকাল ও বিকালে কমপক্ষে ৮ কেজি ইউএমএস খড় খাওয়াতে হবে। এছাড়া উন্নত খাবার ১ কেজি থেকে ধিরে ধিরে বৃদ্ধি করা শুরু করতে হবে। পাতলা পায়খানা দেখা দিলে উন্নত খাবার বা দানাদার খাবারের পরিমাণ কমাতে হবে। ১৫ তম দিনে ভিটামিন এডিই ইঞ্জেকশন ১০ মিলি মাংশে প্রয়োগ করার পর ২০ তম দিনে ক্যাটাফস ইঞ্জেকশন ১০ মিলি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া মিশ্রিত ইউএমএস খাওয়ানোর শুরু থেকে প্রথম ৭ দিন গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে এবং ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে।

গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক পদ্ধতি, গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম, ইউরিয়া বা ইউএমএস এর মাধ্যমে গরুর দ্রুত মাংস বৃদ্ধি, লাভজনক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণ
ইউরিয়া মোলাসেস স্ট্র


  • ২. ২৫ তম দিনে ভিটামিন এডিই ইঞ্জেকশন মাংসে প্রয়োগ করতে হবে এবং ২৫ তম দিন থেকে ১ থেকে ১.৫ লিটার পানির মাঝে ২-৩ মুটো গুড় বা চিটাগুড় দিয়ে তার মাঝে দুই চা চামচ পরিমাণ ইউরিয়া সার দিয়ে গুলিয়ে ৪ কেজি শুকনো ছোট করে কাটা খড়ের সাথে মিশিয়ে বা ৩০ লিটারে বড় বালতির এক বালতি খড় তৈরি করে খাওয়াতে হবে। একি নিয়মে তৈরি করে দিনে দুই বেলা খাওয়াতে হবে। এভাবে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। উন্নত খাবার দুই কেজি থেকে ধিরে ধিরে বাড়ানো যেতে পারে। পাতলা পায়খানা দেখা দিলে উন্নত খাবার বা দানাদার খাবার কমাতে হবে।  ২৭ তম দিনে ক্যাটাফস ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৩. ৩৫ তম দিন থেকে ১ থেকে ১.৫ লিটার পানির মাঝে ২-৩ মুটো গুড় বা চিটাগুড় দিয়ে তার মাঝে তিন চা চামচ  পরিমাণ ইউরিয়া সার দিয়ে গুলিয়ে শুকনা ছোট করে কাটা ৪ কেজি খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। সকাল বিকাল একি ভাবে তৈরি করে মোট ৮ কেজি খড় খাওয়াতে হবে। এভাবে ১০ দিন খাওয়াতে হবে। ৩৫ তম দিনে ভিটামিন এডিই ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে হবে। ৩৮ তম দিনে ক্যাটাফস ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৪. ৪৫ তম দিন থেকে ১ থেকে ১.৫ লিটার পানির মাঝে ২-৩ মুটো গুড় বা চিটাগুড় দিয়ে তার মাঝে চার চা চামচ পরিমাণ ইউরিয়া সার দিয়ে গুলিয়ে ৪ কেজি শুকনা কাটা পলের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এই সময় এই প্রক্রিয়া কৃত খড় সকালে ৪ কেজি ও বিকালে ৪ কেজি খাওয়াতে হবে। এভাবে ৫ দিন খাওয়ানোর পর ধিরে ধিরে ইউরিয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে। দ্রুত এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেন চার কেজি শুকনা খড় বা ২০ লিটারের এক বালিতি খড়ে ১ থেকে ১.৫ লিটার পানির মাঝে ২ মুঠ বা ২০০-২৫০ গ্রাম চিটাগুড় মিশিয়ে তার মাঝে ১৫ মিলি সাইজের মুটকির চার মুটকি ইউরিয়া গুলিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। সকালে চার কেজি খড় ও বিকালে চার কেজি খড় এভাবে প্রক্রিয়া করে গরুকে খাওয়াতে হবে। এভাবে গরু বিক্রি করা না পর্যন্ত ইউরিয়া মিশ্রিত খড় দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে, কোন ক্রমেই সকালে ৪ ও বিকালে ৪  মোট ৮ মুটকি বা ১২০ মিলি এর বেশি ইউরিয়া এক দিনে গরুকে খাওয়ানো ঠিক নয়। প্রতি মুটকির মাপ ১৫ মিলি। তাই প্রতি দিনে ইউরিয়া খাওয়ানোর পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫ x ৮ = ১২০ মিলি। এর চেয়ে বেশি খাওয়ালে পেটে বদ হজম দেখা দিতে পারে। এই সময় থেকে গরুকে ক্যাটাফস ইঞ্জেকশন কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে বা ২০ দিনে ১ টি দেওয়া যেতে পারে। এই সময়ে প্রতিদিন সকালে একটা ও বিকালে একটা এনোরা ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে, বিক্রির আগ পর্যন্ত এটা খাওয়াতে হবে। ৫০ তম দিনে ভিটামিন এডিই ইঞ্জেকশন দিতে হবে এবং এই ইঞ্জেকশন বিক্রির আগ পর্যন্ত প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর প্রয়োগ করতে হবে।
  • ৫. গরুকে পর্যাপ্ত পরিমানে খাবার সরবরাহ করতে হবে। খাবার পাত্রে সবসময় খাবার রাখতে হবে। প্রতি দিন খাবারের সাথে ৬০-১০০ গ্রাম লবন খাওয়াতে হবে। চাউলের কুড়া, ভাতের মাড়,  সব্জির খোসা খাওয়াতে হবে। এছাড়া পারলে ৪-৬ কেজি কাচা ঘাস খেতে দিতে হবে। দানাদার খাদ্য একবারে না দিয়ে ভিজিয়ে খড়ের সাথে মাখিয়ে দেওয়া যেতে পারে অথবা সকাল বিকাল ২ বারে ভাগ করে খাওয়াতে হবে। ভিজিয়ে খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ালে খড় বেশি করে খাওয়ানো সম্ভব হবে। পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। বেশি করে পানি খেলে গরুর পরিপাকে সুবিধা হয়। খেয়াল রাখতে হবে যেন গোবর শক্ত বা খুব ঢিলা না হয়ে যাই। মিডিয়াম নরম রাখার চেষ্টা করতে হবে সব সময়। গোবরে সমস্যা দূর করার জন্য মাঝে মাঝে খাবারের সাথে অল্প পরিমানে খাবার সোডা মিশিয়ে খাওয়াতে হবে যাতে পেটে গ্যাস না জমে। গরুর বাড়তি যত্ম হিসাবে বিভিন্ন ভিটামিক্স জাতীয় গুড়া ভিটামিন ও মিনারেল খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে, এতে ফল আরো ভালো হবে। ইউরিয়া হল এক ধরনের আমিষ যা গরুর ঘাসের অভাব অনেকাংশে পূরণ করে থাকে ফলে গরু দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইউরিয়া খাওয়ানোর দিন থেকে গরুকে নিয়মিত প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। এবং ইউরিয়া খাওয়ানো শুরুর প্রথম সাতদিন ছায়া যুক্ত স্থানে রাখতে হবে। গরুকে কখনো রোদে বাধা চলবে না। তবে সকালের রোদে বাধা যেতে পারে।



উপরোক্ত নিয়মে গরুকে ৩ থেকে ৫ মাস পালন করে বিক্রি করতে হবে। সাধারন্ত কুরবানী(কোরবানি) সামনে রেখে ৩-৫ মাস আগে থেকে মোটা তাজা করণ কর্মসূচি গ্রহণ করলে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। ক্যাটাফস ইনজেকশন সপ্তাহে ২ টা করে করা যেতে পারে। ঘাসের অভাবে খড় আরো বেশি করে দিতে হবে। উপরোক্ত নিয়ম কানুন ১০০-১৫০ কেজি ওজনের একটি গরুর জন্যে প্রযোজ্য। গরু ছোট বা বড় হলে খাবার অবশ্যই বাড়াতে বা কমাতে হবে। 


পরিশেষে এটা বলা যায় যে, উপরোক্ত নিয়মে পালন করলে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে গরু মোটাতাজা করণের পাশাপাশি অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।




কে-মাহমুদ

০৭-০৫-২১

নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon