সনাতন সহজ ও আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়
এখানে যা থাকছে-
- ডেবিট ক্রেডিট কাকে বলে ও সংজ্ঞা
- ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র
- ডেবিট ও ক্রেডিট হিসাব নির্ণয়ের সহজ নিয়ম
- আধুনিক পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়
- সনাতন পদ্ধতি বা স্বর্ণসূত্র
- ডেবিট ক্রেডিট চেনার উপায়
ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় |
ভূমিকাঃ
হিসাববিজ্ঞান মূলত দাঁড়িয়ে আছে দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতি বা হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট এর উপর। ডেবিট ক্রেডিট চেনার উপায়, নির্ণয় পদ্ধতি জানা ও প্রয়োগের মাধ্যমে জাবেদা, রেওয়ামিল তথা হিসাবের সকল স্তরে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করা যায়। আমাদের আজকের আলোচনা হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের সহজ পদ্ধতি ও সূত্র নিয়ে।
ডেবিট ও ক্রেডিট কাকে বলে এর সংজ্ঞাঃ
আমাদের মনে অনেক সময় প্রশ্ন জাগে ডেবিট ক্রেডিট বলতে কি বোঝায়। ইংরেজী Debit বা ডেবিট অর্থ ব্যয় অপর দিকে Credit বা ক্রেডিট অর্থ দায় বা ঋণ। আধুনিক হিসাববিজ্ঞান এ ডেবিট বলতে শুধু ব্যয় কেই বুঝায় না বরং ডেবিট বলতে ব্যয়ের সাথে সাথে সুবিধা ভোগ করা বুঝায়। অপার দিকে ক্রেডিট বলতে শুধু দায় কে না বুঝিয়ে সুবিধা ত্যাগ করাকে বুঝায়।
ডেবিটর ও ক্রেডিটর কি বা কাকে বলেঃ
এক কথায় যে সুবিধা ভোগ করে তাকে ডেবিটর এবং যে সুবিধা ত্যাগ করে তাকে ক্রেডিটর বলে। অর্থাৎ লেনদেনের সাথে জড়িত যে সকল হিসাব বা পক্ষ সুবিধা ভোগ করে তাকে ডেবিটর এবং যে হিসাব বা পক্ষ সুবিধা ত্যাগ করে তাকে ক্রেডিটর বলে।
হিসাব কি বা কাকে বলে এর সংজ্ঞাঃ
যা কিছু ঘটে তাই ঘটনা। ঘটনা গুলোর মাঝে যে ঘটনার ফলে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় তাকে আর্থিক ঘটনা বলে। আর্থিক ঘটনাকে হিসাববিজ্ঞানে লেনদেন বলে। প্রতিটি লেনদেনে কমপক্ষে দুটি পক্ষ থাকে। লেনদেনে জড়িত প্রতিটি পক্ষকে এক একটি হিসাব বলে। সুতারং লেনদেনে জড়িত প্রতিটি পক্ষ হচ্ছে এক একটি হিসাব।
ডেবিট হিসাব ও ক্রেডিট হিসাব কাকে বলে, সংজ্ঞা ও চেনার উপায়ঃ
লেনদেনে জড়িত প্রতিটি পক্ষকে এক একটি হিসাব বলে। যে পক্ষ সুবিধা ভোগ করে সেই পক্ষ বা হিসাব কে ডেবিট হিসাব বলে এবং যে পক্ষ সুবিধা প্রদান করে সেই পক্ষকে ক্রেডিট হিসাব বলে। আর লেনদেনে জড়িত ডেবিট পক্ষ গুলোকে ডেবিটর ও ক্রেডিট পক্ষ গুলোকে ক্রেডিটর বলে। যে পক্ষ ডেবিটর সেই পক্ষে থাকা হিসাব ডেবিট হিসাব এবং যে পক্ষ ক্রেডিটর সেই পক্ষে থাকা হিসাব ক্রেডিট হিসাব। অর্থাৎ যে পক্ষ বা হিসাব সুবিধা ভোগ করে সেই পক্ষে থাকা হিসাব কে ডেবিট হিসাব এবং যে পক্ষ বা হিসাব সুবিধা প্রদান করে সেই পক্ষে থাকা হিসাব কে ক্রেডিট হিসাব বলে যা দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতির মূল নীতি।
ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র বা প্রকার ভেদঃ
হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের প্রচলন লুকা প্যাসিওলি'র দুতরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম থেকেই উৎপত্তি ঘটেছে। তিনি তার লিখিত বই "সুম্মা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিয়া প্রপোরশনিয়েট প্রপোরশনালিটা" এ দুতিরফা নীতির ধারনা প্রথম তুলে ধরেন। এজন্য তাকে দু-তরফা দাখিলা পদ্ধতির জনক বলা হয়। হিসাবের উন্নতিকল্পে প্রাচীন কাল বা মধ্যযুগ থেকে আধুনিক হিসাববিজ্ঞান উন্নতি সাধন করে হিসাবের ধারনা পরিবর্তিত হয়েছে। হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয় তারি ফসল। উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র সমূহকে ২ টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, যথা-
১. সনাতন বা স্বর্ণ যুগিয়ো পদ্ধতি বা স্বর্ণসূত্র
২. আধুনিক বা সমীকরণ পদ্ধতি
নিম্নে সনাতন ও আধুনিক বা সমীকরণ উভয় পদ্ধতিতে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র বা পদ্ধতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো।
সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র বা নিয়মঃ
সনাতন পদ্ধতিতে হিসাবের ডেবিট বা ক্রেডিট নির্ণয়ের জন্য. বা চেনার জন্য আমাদের প্রথমে এটা মনে রাখতে হবে যে, সনাতন নিয়মে সমস্ত হিসাব কে ৩ টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়, ব্যক্তিবাচক হিসাব, সম্পত্তি বাচক হিসাব আর নামিক হিসাব। নিম্নে সনাতন বা স্বর্ণসূত্রে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম বা পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-
- ১. ব্যক্তিবাচক হিসাব সুবিধা ভোগ করলে ডেবিট হয় এবং সুবিধা প্রদান করলে ক্রেডিট হয়।
- ২. সম্পত্তি বাচক হিসাব অনুযায়ী সম্পত্তি বৃদ্ধি পেলে ডেবিট হয় এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট হয়।
- ৩. নামিক হিসাব অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট এবং হ্রাস পেলে ক্রেডিট আবার, আয় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং হ্রাস পেলে ডেবিট হয়।
সাধারন্ত যে সকল হিসাব দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে বোঝায় তাকে ব্যক্তিবাচক হিসাব বলে, সকল সম্পত্তি বা সম্পদ কে সম্পত্তি বাচক হিসাব বলে এবং সকল আয় ও ব্যয় কে নামিক হিসাব বলে।
রোদেলার নিকট ৫০০ টাকার বাকিতে পন্য বিক্রয়, লেনদেনটি তে জড়িত হিসাব দুটি হলো, ১. রোদেলা বা দেনাদার হিসাব ও ২. বিক্রয় হিসাব। এখানে রোদেলা বা দেনাদার হিসাব বলতে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কে বোঝায় তাই এটি ব্যক্তিবাচক হিসাব অপর দিকে বিক্রয় হিসাব বলতে প্রতিষ্ঠানের আয় কে বোঝায় তাই এটি একটি নামিক হিসাব। ডেবিট ক্রেডিটের সূত্র প্রয়োগ করে পায়-
- ১. দেনাদার বা রোদেলা হিসাব - ডেবিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী রোদেলা বা ব্যক্তির নিকট বাকিতে পন্য বিক্রয় করায় রোদেলা বা ব্যক্তি সুবিধা ভোগ করছে)
- ২. বিক্রয় হিসাব - ক্রেডিট (কারণ বিক্রয় করার মাধ্যমে আয় করা হয়, আর আয় হলে সেটা নামিক হিসাব। নামিক হিসাব অনুযায়ী বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় বাড়ছে তাই বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট)
আধুনিক বা সমীকরণ পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের সূত্র বা নিয়মঃ
আধুনিক বা সমিকরণ পদ্ধতিতে হিসাবের ডেবিট ক্রেডিট নির্ণয়ের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের প্রকার বা শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কেও ধারনা থাকা উচিৎ। আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব সমূহকে ৫ টি ভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
- সম্পদ ও সম্পত্তি হিসাব
- ব্যয় হিসাব
- আয় হিসাব
- দায় হিসাব
- মালিকানা সত্ত্ব হিসাব
- ১. সম্পদ ও সম্পত্তি এবং ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট আর হ্রাস পেলে ক্রেডিট হবে।
- ২. আয়, দায় ও মালিকানা সত্ত্ব বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট এবং হ্রাস পেলে ডেবিট হবে।
রোদেলার নিকট থেকে বাকিতে ৫০০ টাকার পন্য ক্রয়, একটি লেনদেন। এখানে হিসাব সমূহ, ১. ক্রয় হিসাব ও ২. প্রদেয় বা পাওনাদার (রোদেলা) হিসাব।
- ১. যেহেতু ক্রয় হিসাব ব্যয় জাতীয় হিসাব এবং ক্রয় করার ফলে ব্যয় বা খরচ বাড়ে এবং সূত্র অনূযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট তাই ক্রয় হিসাব ডেবিট হবে।
- পাওনাদার (রোদেলা) হিসাব দায় জাতীয় হিসাব এবং বাকিতে ক্রয় করায় প্রতিষ্টান অন্যের নিকট দায় গ্রস্থ হচ্ছে বা দায় দেনা বেড়ে যাচ্ছে এবং সূত্র অনূযায়ী দায় বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট তাই পাওনাদার (রোদেলা) হিসাব ক্রেডিট হবে।
উদাহরণের সাহায্যে সনাতন পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট চেনার বা নির্ণয়ের উপায়ঃ
- ১. নগদে পন্য বিক্রয়।
নগদান হিসাব -ডেবিট (কারণ সম্পত্তিবাচক হিসাব অনুযায়ি সম্পদ বৃদ্ধি)
বিক্রয় হিসাব -ক্রেডিট (কারণ নামিক হিসাব অনুযায়ী আয় বৃদ্ধি)
- ২. আয়কর প্রদান করা হলো।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী দায় হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পত্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস)
- ৩. জীবন বিমা প্রদান করা হলো।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী দায় হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পত্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস)
- ৪. মালিক নিজ প্রয়োজনে নগদ উত্তলোন করলেন।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী দায় হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পত্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী সম্পদ হ্রাস)
- ৫. মালিক নিজ প্রয়োজনে ব্যাংক হতে উত্তলোন করলেন।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী সুবিদা গ্রহণ)
ব্যাংক হিসাব -ক্রেডিট (কারণ ব্যক্তিবাচক হিসাব অনুযায়ী সুবিধা প্রদান)
উদাহরণের সাহায্যে আধুনিক বা সমীকরণ পদ্ধতিতে ডেবিট ক্রেডিট চেনার বা নির্ণয়ের উপায়ঃ
- ১. নগদে পন্য বিক্রয়।
নগদান হিসাব -ডেবিট (কারণ সম্পদ বৃদ্ধি)
বিক্রয় হিসাব -ক্রেডিট (কারণ আয় বৃদ্ধি)
- ২. আয়কর প্রদান করা হলো।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ মালিকানা সত্ত্ব হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পদ হ্রাস)
- ৩. জীবন বিমা প্রদান করা হলো।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ মালিকানা সত্ত্ব হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পদ হ্রাস)
- ৪. মালিক নিজ প্রয়োজনে নগদ উত্তলোন করলেন।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ মালিকানা সত্ত্ব হ্রাস)
নগদান হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পদ হ্রাস)
- ৫. মালিক নিজ প্রয়োজনে ব্যাংক হতে উত্তলোন করলেন।
উত্তলোন হিসাব -ডেবিট (কারণ মালিকানা সত্ত্ব হ্রাস)
ব্যাংক হিসাব -ক্রেডিট (কারণ সম্পদ হ্রাস)
হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় ও জানতে বা বের করতে হিসাবের শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন। আশাকরি পরবর্তী পাঠে শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো। হিসাববিজ্ঞান ভয় দূরকরণে আমাদের সাথেয় থাকুন।
আজ এ পর্যন্তই।
শুভকামনায়-
কে-মাহমুদ
২৬-০২-২০২১
10 comments
This web page is very helpful for learning accounting. I really like this web page.
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ------
1timeschool.com এর পক্ষে,
রোদেলা
অনেক উপকারে আসছে। ধন্যবাদ
মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি ২০২১ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী।এগুলো খুব উপকারে আসবে আমার জন্য।
ধন্যবাদ।
প্রয়োজনীয় সব তথ্য পেতে 1timeschool.com মোবাইলে সেভ করে রাখুন।
ধন্যবাদান্তে
রোদেলা
খুব সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে,,,আপনাকে ধন্যবাদ
আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com এর পক্ষে,
রোদেলা
ধন্যবাদ আমাদের সাথেই থাকুন।
"newsvander24"
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon