দূর্নীতি কি, প্রকারভেদ, দূর্নীতি মুক্ত সামাজ ও উন্নয়ন
- দূর্নীতি কি বা কাকে বলে
- দূর্নীতির সংজ্ঞা
- দূর্নীতি বলতে কি বোঝায়
- দূর্নীতি প্রতিরোধে করণীয়
- দূর্নীতি মুক্ত করন, প্রতিরোধ ও সামাজিক উন্নয়ন
- অনুচ্ছেদ, রচনা ও বিতর্ক
দূর্নীতি বনাম উন্নয়ন |
একটি অনুচ্ছেদ বা রচনা বা বিতর্ক বা আলোচনা করলে কেমন হয়? দূর্নীতি বনাম উন্নয়ন নিয়ে। আজ আমাদের আলোচনা বা অনুচ্ছেদ, রচনা বা বিতর্ক দূর্নীতি মুক্ত সমাজ বনাম উন্নয়ন নিয়ে।
দূর্নীতি মুক্ত সমাজ-ই উন্নয়নের পূর্ব শর্ত
ভূমিকাঃ
উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আমরা যখন উন্নত ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি তখন রেডিও, টিভি, ফেসবুক, টুইটার, ইনেস্টাগ্রাম বা বিভিন্ন সামাজিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের সর্বত্র চোখে পড়ে দূর্নীতি, দূর্নীতি এবং দূর্নীতি। দূর্নীতি যেন রাষ্ট্রের শিরা - উপশিরায়। দূর্নীতি মুক্ত সমাজ ছাড়া কোন জাতি, সম্প্রদায় এমন কি কোন রাষ্ট্র মুক্ত হতে পারে না। পারেনা নিজেকে উন্নতির চরম শিখরে অবতীর্ণ করতে।
দূর্নীতি কি, কাকে বলে বা দূর্নীতির সংজ্ঞাঃ
ইংরেজী "Corruption" শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ, "দূর্নীতি"। বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রভাষক, স্টিফেন ডি. মরিস রাজনৈতিক দূর্নীতি সম্পর্কে বলেন,"Political corruption is the illegitimate use of public power to benefit a private interest.
" সুতারং, দূর্নীতি হলো এমন একটি কার্য, যেখানে অনৈতিক অর্থ প্রদানের কারণে তৃতীয় কোন পক্ষ সুবিধা ভোগ করে এবং প্রভাববিস্তার করে। এখানে দূর্নীতির সাথে যুক্ত পক্ষটি এবং তৃতীয় পক্ষ উভয়ি লাভবান হয় এবং এই কার্য্যে দূর্নীতিগ্রস্থ পক্ষটি থাকে নীরব কর্তৃপক্ষ।
দূর্নীতি বনাম অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ
একটি দেশ বা সমাজের প্রধান চালিকাশক্তি তার অর্থনীতি। Microeconomics ও Macroeconomics বা ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতি কখনোই দূর্নীতি মুক্ত বা দূর্নীতি প্রতিরোধ ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, উর্ধ্ব মুখি জিডিপি (GDP) বা সামাজিক খাতে অগ্রগতির জন্য চাই দূর্নীতি মুক্ত অর্থনীতি। Transparency International এর সূচক অনুযায়ী বিশ্বের চরম দূর্নীতিগ্রস্থ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পাকাপোক্ত! দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতি করে তুলেছে অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেট ভর্তি। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের অর্থ আত্মসাৎ সহ অগণিত অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি যেন সামাজিক উন্নয়ন কে পিছে টেনে ধরছে।
রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক দূর্নীতি বনাম সায়াজিক উন্নয়নঃ
"প্রশাসন জনগনের বন্ধু" - যেন কিছুতেই মানা যাই না আর। ঘুষ, অনৈতিক লেনদেনের মতো অসংখ্য প্রশাসনিক দূর্নীতির জাঁতাকলে প্রশাসন যেন আজ ক্ষমতাবানদের হস্তগত। অর্থ আত্মসাৎ, প্রশাসনিক চাঁদাবাজি, রাষ্ট্রিয় ও ব্যক্তিগত সম্পদ দখলের মতো ঘটনা ঘটছে অহরহো। নিরীহ বা নির্দোষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নানারকম দূর্নীতির কারণে পোহাতে হচ্ছে নানারকম ভোগান্তি। প্রশাসনিক অনৈতিক কার্যকালাপের ফলে সমাজের একপক্ষ ধনী থেকে আরো ধনী এবং সুবিধার পর সুবিধা পাবার পাশাপাশি অন্য পক্ষ হয়ে পড়ছে গরীব থেকে আরো গরীব, নির্যাতিতা থেকে আরো নির্যাতিতা। দূর্নীতি মুক্ত প্রশাসনিক অবকাঠামো ছাড়া সামাজিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।
Legal Corruption বনাম Social Progress:
Legal Corruption বা আইনী দূর্নীতি সামাজিক অগ্রগতি তথা Social Progress এর অন্যতম অন্তরায়। বিচারব্যবস্থায় দূর্নীতির ফলে নির্দোষ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে অহরহো। এরকম ঘটনা সমাজে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
দূর্নীতি বনাম সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিঃ
যারা দূর্নীতি করে তারা আজ সমাজের পরাক্রমশালী অংশ। সমাজে এদেরি গলার জোর বেশি। এরাই সম্মানিত। এদের বাইরে বাকি সকলে যেন মেরুদন্ড নিচু করে হাটছে। ভঙ্গুর, চক্রান্ত, দূর্নীতি গ্রস্থ সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না।
শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে দূর্নীতি বনাম মেরুদণ্ডহীন জাতীঃ
দূর্নীতি আজ শিক্ষাক্ষেত্র যেন সম্পূর্ণ রূপে গ্রাস করে ফেলেছে। SSC, HSC সহ প্রায় সকল পাবলিক পরীক্ষা, ইউনিভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি চাকুরী বা নিয়োগ পরীক্ষা দূর্নীতি আজ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছে। এগুলো যেম দূর্নীতি চাষের শস্যক্ষেত্র। প্রশ্নপত্র ফাস, টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট প্রদান এমনকি নিয়োগ বানিজ্যে মেধা শূন্য হয়ে পড়েছে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। সমাজ হয়ে পড়েছে মেধা শূন্য জাতী হয়ে পড়েছে মেরুদণ্ডহীন। চিকিৎসা ক্ষেত্রে দূর্নীতির রূপ আরো ভয়াবহ। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত ঘোষণা করে চিকিৎসা ফি নেওয়া, ভূয়া কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদান, হাসপাতালের একটি পর্দা ক্রয়ে এক কোটি টাকা খরচ দেখানোর মতো হাস্যকর সব দূর্নীতি এই চিকিৎসাব্যবস্থায়। নানা অনিয়ম আর দূর্নীতিতে চিকিৎসা ব্যবস্থা সয়লাব। ভঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়।
স্থানীয় প্রশাসন বনাম দূর্নীতিঃ
সামাজিক উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসন বিরাট ভূমিকা পালন করে। নানারকম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসন সর্বদা অগ্রণী ভূমকা পালন করে। COVID-19 এর কষাঘাতে সমাজ যখন জর্জরিত তখন গণমাধ্যমে খবর আসে ভিজিএফ কার্ড চুরি, মৃত ব্যক্তির নামে বৃদ্ধভাতা প্রদান, একই ব্যক্তিকে একাধিক বেকার ভাতা প্রদানের মতো নানা অনৈতিক কর্মকান্ডের। স্থানীয় প্রশাসনের দূর্নীতির কারনে সমাজের এক শ্রেণী হয়ে পড়েছে সুবিধা বঞ্চিত। পঙ্গু সমাজব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক দূর্নীতি বনাম সামাজিক উন্নয়নঃ
কোন দেশের রাজনীতি সেই দেশের চালিকাশক্তি। রাজনীতি দূর্নীতি গ্রস্থ হলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, দেখা দেয় মুদ্রাস্ফীতি, সৃষ্টি হয় ধনী গরীব বৈষম্য। সমাজের এক শ্রেণী হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হয়ে পড়ে রুদ্ধ। বণ্টন প্রক্রিয়া হয়ে পড়ে অসমো। সমাজে তৈরি হয় অসমো প্রতিযোগিতা যা সামাজিক উন্নয়নের অন্তরায়।
Digital Corruption বনাম সামাজিক উন্নয়নঃ
সাইভার ক্রাইম, কপিরাইট আইনের অপব্যবহার সহ নানা রকম ইন্টারনেট ভিত্তিক দূর্নীতি আজ রূপ নিয়েছে ডিজিটাল দূর্নীতির। সমাজ যখন ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে তখন ডিজিটাল দূর্নীতি বাধা হয়ে সামনে আসে। Graft, Blacmail, Extortion, Influence pedding, Networking abuse of discretion, Favoritism, Nepotism, Clientelism
এর মত নানা প্রকার ডিজিটাল দূর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়।
দূর্নীতি রোধে করণীয়ঃ
পঙ্গু সমাজ কেউ-ই প্রত্যাশা করে না। সামাজিক উন্নয়ন আর ডিজিটাল দেশ গড়তে দূর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। দুদক বা দূর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে দেশ কে দূর্নীতি মুক্ত করনে সরকারের নানামুখী কর্মসূচি ও পদক্ষেপ প্রশংসা যোগ্য। একমাত্র দূর্নীতি মুক্ত কোন সমাজি পারে নিজেকে মাথা উচু করে দাড় করাতে। প্রশাসনিক পর্যায়ে জবাবদিহিতা, দূর্নীতি রোধে কমিশন গঠণ, সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি, ধর্মিয় কৃষ্টি কালচারের প্রতি শ্রদ্ধা, একচেটিয়া কর্তৃত্ব এবং যথেচ্ছা সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার খর্ব করে, সেবাদান কর্মকান্ড কে বিকেন্দ্রীকরণ করে সমাজ কে দূর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, "দূর্নীতি মুক্ত সমাজ-ই উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
" "উন্নয়ন আর দূর্নীতি মাসতুতো ভাই।
"- কথাটি একমাত্র দূর্নীতিবাজদের মুখেই মানায়। Petty Corruption, Grand Corruption, Systemic Corruption, Legal Corruption
সহ সকল প্রকার দূর্নীতি রোধের মাধ্যমেই একমাত্র সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব। তাই, সরকার, ব্যক্তি ও সামাজিক সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে দূর্নীতি মুক্তকরনে এগিয়ে আসা উচিৎ। আমাদের শ্লোগান হওয়া উচিৎ, " দূর্নীতি নয়, আমরা উন্নয়ন চাই।
"
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon