মঙ্গলবার

সংখ্যা পদ্ধতির এ টু জেড

বাইনারি, ডেসিমাল বা দশমিক, অক্টাল ও হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি


  • সংখ্যা পদ্ধতি কি বা কাকে বলে।
  • সংখ্যা পদ্ধতির বেজ (Base) বা ভিত্তি কি।
  • সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ।
  • পজিশনাল ও ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি।
  • ডেসিমাল বা দশমিক, বাইনারি,  অক্টাল ও হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতির গঠন, রূপ ও ব্যখ্যা।

সংখ্যা পদ্ধতি কি, সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তি, প্রকারভেদ, পজিশনাল, ননপজিশনাল, ডেসিমাল বা দশমিক, বাইনারি, অক্টাল, হেক্সাডেসিমেল
সংখ্যা পদ্ধতি


সংখ্যা কিঃ

আমরা গণনা করার জন্য নানা প্রকার সংকেত, প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করে থাকি। গণনায় ব্যবহৃত এ সকল সংকেত, প্রতীক বা চিহ্ন কে সংখ্যা বলে। যেমন বাংলাদেশী'রা গণনার জন্য ব্যবহার করে ১, ২, ৩, ৪ ইত্যাদি সংকেত প্রতীক বা চিহ্ন  আবার ইংরেজ'রা ব্যবহার করে 1, 2, 3 ইত্যাদি, রোমানিয়'রা ব্যবহার করে,  i, ii, iii, iv. ইত্যাদি। দেশ ভেদে এ সকল বর্ণ বা প্রতীক বা চিহ্নের পরিবর্তন হতে পারে।



সংখ্যা পদ্ধতিঃ

প্রয়োজন ও গণনার তাগিদে নাম্বার সিস্টেম (Number System) বা সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব। পদ্ধতি বলতে সাধারন্ত আমরা কৌশল, নিয়ম বা সিস্টেম কে বুঝি। গণনার প্রয়োজনে কোন কৌশল বা নিয়ম ব্যবহার করে আমরা গণনার কাজ সম্পন্ন করলে সেই নিয়ম বা কৌশল কে সংখ্যা পদ্ধতি বলে। সংখ্যা পদ্ধতি মূলত সংখ্যার মান নির্ধারণ ও গঠনের একটি প্রক্রিয়া।


গণনার তাগিদে মানুষ নানা ভাবে সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। কয়েকটি মূল চিহ্ন, প্রতীক বা সংখ্যাকে ভিত্তি বা বেজ ধরে নানারকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে গঠন করা হয়েছে নানারকম সংখ্যা পদ্ধতির।  প্রতীক কে কেন্দ্র করে বা ভিত্তি করে বা বেজ ধরে গঠন করা হয়েছে দশ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি। ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ এই দশটি প্রতীক বা সংখ্যা কে ভিত্তি করে এই সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে উঠেছে তাই একে দশ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। দশ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ৯ এর পরবর্তী সংখ্যাটি হল ১০। এখানে ১০ সংখ্যাটি লিখতে ১ এবং ০ ব্যবহার করা হয়েছে। ০ থেকে ৯ পর্যন্ত মোট ১০টি সংখ্যা দ্বারা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে সকল সংখ্যা লিখা ও গণনা করা যায়। অর্থাৎ এই পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ ১০ তাই এই সংখ্যা পদ্ধতিকে ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে।


আইসিটি (ICT) তে সংখ্যা পদ্ধতির ভূমিকা ব্যাপক। সংখ্যা পদ্ধতি আয়ত্তে আনার মাধ্যমে যান্ত্রিক কার্যপ্রণালী ও গণনা সম্পর্কিত সঠিক ধারনা অর্জন সম্ভব।



সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তিঃ

মানুষের প্রয়োজনেই সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে নিজের মত করে সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব ঘটিয়েছে এবং এখনো ঘটাচ্ছে। গণনা শুরুর প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ অসংখ্য সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। ইংরেজী Base বা বেজ  শব্দের বাংলা আভিধানিক অর্থ ভিত্তি বা খুঁটি। সংখ্যা পদ্ধতিতে  মূল, প্রতীক বা সংখ্যা দ্বারা সকল সংখ্যা গঠন, প্রকাশ বা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। যে কয়টি মূল সংখ্যা দ্বারা ঐ সংখ্যা প্রকাশ করা হয় সে সকল সংখ্যা গুলকে সংখ্যা পদ্ধতির মূল সংখ্যা বলে এবং যত টি মূল সংখ্যা ঐ সংখ্যা পদ্ধতিতে আছে সেই কয়টি সংখ্যার পরিসংখ্যান কে ঐ সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ বলে। দশ ভিত্তিক বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ মোট দশটি সংখ্যাকে মূল ধরে দশমিক সংখ্যা গণনা বা নির্ণয় করা হয়। সুতরাং এখানে ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ প্রতিটি সংখ্যা বা প্রতীক হল দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মূল আর ১০ টি প্রতীক বা চিহ্ন যেহেতু দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মূল সেহেতু দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ হল ১০। দশমিক সংখ্যা ১০ টি আলাদা আলাদা মূল প্রতীক ব্যবহার করে গঠিত হয় বলে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিকে দশ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।



সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদঃ

প্রয়োজনের তাগিদে অসংখ্য সংখ্যা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। বৈশিষ্ট্য গত দিক দিয়ে সকল সংখ্যা পদ্ধতিকে ২ টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-


  • ১. পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি 
  • ২. ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি 

পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলতে সে সকল সংখ্যা পদ্ধতিকে বলা হয়ে থাকে যে সকল সংখ্যা পদ্ধতি নির্দিষ্ট বেজ  সংখ্যা বা ভিত্তি সংখ্যাকে কেন্দ্র করে গঠিত ও নির্ণয় করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে সংখ্যা পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট ভিত্তি সংখ্যা বা প্রতীক আছে সে সকল সংখ্যা পদ্ধতিকে পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। যেমন- দশমিক সংখ্যা (কারন-এর ভিত্তি সংখ্যা ১০ টি), অক্টাল সংখ্যা (কারন এর ভিত্তি সংখ্যা ৮ টি), ইত্যাদি।


ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতির কোন নির্দিষ্ট ভিত্তি বা বেজ  নেই। অর্থাৎ যে সংখ্যা পদ্ধতিতে কোন মূল সংখ্যা বা সংখ্যা সমষ্টিকে মূল ধরে সংখ্যা পদ্ধতি গঠিত হয় না তাকে ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। আমরা রোমান সংখ্যা পদ্ধতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাব রোমান সংখ্যায় i এর পরের সংখ্যা ii, তার পরের সংখ্যা iii, তার পরের সংখ্যা হওয়া উচিত ছিল iiii কিন্তু সেটা না হয়ে হয়েছে iv, যা গরমিল। রোমান সংখ্যা পদ্ধতিতে এরূপ অসংখ্য গরমিল লক্ষ্য করা যায়। রোমান সংখ্যা পদ্ধতি নির্দিষ্ট কোন মূল বা প্রতীক কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নি তাই এই সংখ্যা পদ্ধতির সঠিক ভিত্তি বা বেজ সংখ্যা নির্ধারণ করা যায় না। সুতরাং রোমান সংখ্যা একটি ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি। অর্থাৎ যে সংখ্যা পদ্ধতির নির্দিষ্ট কোন ভিত্তি সংখ্যা নেই সে সকল সংখ্যা পদ্ধতিকে ননপজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে।



কয়েকটি জনপ্রিয় পজিশনাল সংখ্যা পদ্ধতিঃ

ডেসিমাল বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি- যে সংখ্যা পদ্ধতির মূল ১০ টি সংখ্যা সেই সংখ্যা পদ্ধতিকে ১০ ভিত্তিক বা ১০ বেজ বিশিষ্ট সংখ্যা পদ্ধতি বা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বা ডেসিমাল সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির মূল সংখ্যা গুলো হল, ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮ ও ৯। সুতরাং দশমিক একটি ১০ বেজ বিশিষ্ট বা ১০ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি।


অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি- অক্টাল অর্থ আট। ৮ টি মূল সংখ্যাকে কেন্দ্র করে অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি গঠিত। ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ও ৭ হল অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির মূল সংখ্যা। অক্টাল পদ্ধতিতে ৭ এর পরের সংখ্যা হল ১০। এই পদ্ধতিতে ৮ এবং ৯ ব্যবহার করা হয় না। ০ থেকে ৭ মোট আট টি সংখ্যা এবং এই আট টি সংখ্যাকে কেন্দ্র করে অক্টাল সংখ্যা গঠিত বলেই একে আট ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি বা অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। অক্টাল সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি বা বেজ ৮।


হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি- হেক্সা অর্থ ১৬, ষোল টি প্রতীক বা সংখ্যাকে মূল ধরে এই সংখ্যা পদ্ধতি গঠিত। হেক্সাডেসিমেল তাই ১৬ ভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতি। হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতিতে ব্যবহৃত মূল প্রতীক বা সংখ্যা গুলো হল, ০, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, A, B, C, D, E এবং F, ফলে এই সংখ্যা পদ্ধতিতে ৯ এর পরবর্তী সংখ্যা A, আবার F এর পরের সংখ্যা ১০, ১০ এর পরের সংখ্যা ১১। মোট ষোল টি মূল সংখ্যাকে কেন্দ্র করে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি গঠিত হয় বলে একে ষোল ভিত্তিক বা ১৬ বেজ বিশিষ্ট সংখ্যা পদ্ধতি বা ষোল দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।


বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি- বাইনারি শব্দের অর্থ দুই। ০ এবং ১ এই দুটি সংখ্যাকে মূল ধরে বাইনারি সংখ্যা গঠিত। দুটি সংখ্যা বা প্রতীক যেহেতু বাইনারি সংখ্যার মূল তাই বাইনারি কে দুই ভিত্তিক বা দুই বেজ বিশিষ্ট সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। পরপর কয়েকটি বাইনারি সংখ্যা হল, ০, ১, ১০, ১১, ১০০, ১০১, ১১০, ১১১, ১০০০ ইত্যাদি। বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে ০ এবং ১ ছাড়া অন্য কোন সংখ্যা ব্যবহৃত হয় না। বর্তমানের প্রায় সকল ডিজিটাল যন্ত্র পাতি বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতিতে পরিচালিত ও কার্যাদি সম্পাদন করে থাকে।


আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী পাঠে সংখ্যা পদ্ধতি নিয়ে আরো বিস্তারিত তথ্য নিয়ে হাজির হব এই প্রত্যাশায়, বিদায়-

কে-মাহমুদ
২-১১-২০২০


নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon