জিডি করার সঠিক নিয়ম
- জিডি করার নিয়ম ও উপকারিতা
- অনলাইনে জিডি করার নিয়ম
- সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে করণীয়
- জিডি খরচ ও ফর্ম পূরণের নিয়ম
জিডি করার নিয়ম |
জেনারেল ডায়েরি (General Dairy) এর সংক্ষিপ্ত রূপ জিডি (GD)। সাধারন্ত সরাসরি মামলা যোগ্য নয় বা আমল যোগ্য নয় এমন কোন মামলার জন্যে পুলিশ স্টেশন (polish station) বা থানায় প্রাথমিক ভাবে যে সাধারণ ডায়েরি করা হয় তাকে জিডি বলে।
অনলাইন জিডি কিঃ
ডিজিটাল ব্যবস্থার উন্নতির ফলে অনলাইন ভিত্তিক প্লাটফর্ম বেশ জনপ্রিয় ও সহজ হয়ে উঠেছে। জনগনের সুবিধার দিক বিবেচনা করে কিছু কিছু থানায়, থানার নিজস্ব ওয়েবসাইটে অনলাইন ভিত্তিক জিডি করার সুবিধা দিয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক জিডি করার সুবিধাকে অনলাইন জিডি বা অনলাইনে জিডি বলে।
জিডি ফর্ম এর নমুনা ছক ও পূরণের নিয়মঃ
জিডি সাধারন্ত নির্দিষ্ট ফরমেটে কিছু বিশেষ তথ্য সহ পুরন করতে হয়। জিডি ফর্ম প্রতিটি থানাতে পাওয়া যায়। এটি বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। থানায় যেয়ে জিডি ফর্ম চাইলেই জিডি ফর্ম পাওয়া যাবে এমন কি থানায় জিডি করার জন্য দ্বায়িত্তে থাকা কোন পুলিশ জিডি ফর্ম পূরণ করতে সাহায্য করবে। এসকল কোন কাজ তথা ফর্ম প্রাপ্তি এবং পূরণের জন্য কোন প্রকার ফি লাগবে না। নিম্নে জিডি ফর্মের একটি নমুনা ছক তুলে ধরা হল-
জিডি(GD) এর নমুনা ছক |
---|
তারিখঃ ০৯-১১-২০২০
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাভার থানা, সাভার, ঢাকা। বিষয়ঃ সাধারণ ডায়েরি করণের (জিডি) জন্য আবেদন পত্র। জনাব, যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, নামঃ -------কে-মাহমুদ--------- বয়সঃ ------১৮----------------- পিতা/স্বামীঃ --এ.বি.সিদ্দিক-- মাতাঃ----মিসেস এ.বি.সিদ্দিক---- ঠিকানাঃ---এডভান্স টিচিং সেন্টার, সাভার থানা, সাভার, ঢাকা। এই মর্মে জানাচ্ছি যে, আজ/গত ----০১-১১-২০২০----- ইং তারিখ,---- বিকাল ৩টার------ সময়, ----সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার, ঢাকা------ থেকে আমার নিম্নোক্ত কাগজাদি/মালামাল হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া কাগজাদি/মালামালের বিবরণ ও সংখ্যা- ১. এস.এস.সি সার্টিফিকেট, রেজিঃ নং- ১০০৩৪৫৬৭, রোল নং- ১১১১২২, বোর্ড- ঢাকা, পাশের সন- ২০১৭------- সংখ্যা-১টি। ২.--------------------------- ৩.--------------------------- বিষয়টি থানায় অবগতির জন্য সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) অন্তর্ভুক্ত করার বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি। বিনীত নিবেদক, কে-মাহমুদ (আবেদনকারীর স্বাক্ষর) পূর্ণ নামঃ মোহাম্মাদ কে-মাহমুদ স্থায়ী ঠিকানাঃ কে.বাড়ীয়া, সাভার থানা, সাভার, ঢাকা। মোবাইল নংঃ ০১৩০৩৬২১৫২২ |
অনলাইনে জিডি করার নিয়মঃ
ডিজিটালাইজেশনের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের কিছু কিছু থানায় জিডির অনলাইন সার্ভিস চালু হয়েছে, ইন্ডিয়া তেও একি রকম ব্যবস্থা রয়েছে। তবে মিথ্যা ও নানারকম প্রতারণাময় কর্মকান্ডের ফলে অনলাইন সার্ভিস মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। পরীক্ষা মুলক ভাবে এই কার্য্যক্রম মাঝে মাঝে অব্যাহত থাকে এবং আশা করা যাচ্ছে অনলাইন সার্ভিস খুব দ্রুত সম্প্রসারন ও নিয়মিত হবে।
অনলাইনে জিডি ফর্ম পূরণের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের অনলাইন সার্ভিস ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েব সাইটে "সিটিজেন হেল্প রিকয়েস্ট" অপশনে পাওয়া যাবে। এই অপশন থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্ম পূরণ করে সাবমিট করলে জিডি করা হয়ে যাবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েব সাইটে যেয়ে "মেইল(E-mail)" অপশনে ক্লিক করে সকল প্রকার তথ্য দিয়ে মেইল করলেও আপনার আবেদন গ্রহণ হবে এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আপনার সাথে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন।
জিডি ফর্ম পূরণ করার পর করণীয়ঃ
থানায় যেয়ে হোক বা অনলাইনেই হোক জিডি ফর্ম পূরণ করার পর একটি জিডি নম্বর পাওয়া যাবে যা অতি যত্ম সহকারে সংরক্ষণ করতে হবে। থানায় যেয়ে ফর্ম পূরণ করলে একি তথ্য দ্বারা ২ কপি ফর্ম পূরণ করতে হবে এক কপি থানায় জমা করে রাখতে হবে এবং অন্য কপি ভারপ্রাপ্ত অফিসারের স্বাক্ষর ও জিডি নং যুক্ত করে নিজের কাছে সংরক্ষণ করতে হবে। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করলে অবশ্যই প্রিন্ট কপি বের করে রাখতে হবে এবং জিডি নম্বর সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এই নম্বর সম্বলিত ও স্বাক্ষর সম্বলিত কপিই পরবর্তীতে আইনি কাজে বা যে কোন প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে।
সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে করণীয়ঃ
সার্টিফিকেট হারিয়ে গেলে-
- প্রথম কাজ থানায় যেয়ে একটি জিডি করা।
- অফিসারের স্বাক্ষর ও জিডি নম্বর সম্বলিত এক কপি পূরণ করা জিডি ফর্ম নিজের কাছে রাখা।
- পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপন দেওয়া (অনেক সময় বিজ্ঞাপন না দিলেও চলে)।
- জিডি কপি ও যে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে সেই পত্রিকা সহ নিজ বিদ্যালয় বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ করা।
- এর পর কাজ হল, জিডি কপি, বিজ্ঞপ্তি সহ পত্রিকা সহ নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ডে যাওয়া এবং বোর্ড থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে নির্দিষ্ট ফি প্রদানপূর্বক নতুন সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা ও শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর সম্বলিত রিসিট (ফর্ম পূরণ ও টাকা দেওয়ার প্রমাণ) সংগ্রহ করা।
- বোর্ড সার্টিফিকেট দেওয়ার সম্ভাব্য তারিখ বলে দেবে। সম্ভাব্য তারিখের পর যেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে রিসিট দেখিয়ে যে কোন অফিস ডে তে, অফিস সময়ে নতুন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা যাবে।
জিডি কোন থানায় করা উচিৎঃ
জিডি যে কোন থানায় করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে ভালো নিজ এলাকার নিজ থানায় জিডি করা। কারন অন্য থানায় জিডি করলে প্রশাসনিক সহায়তা পেতে ঝামেলা হয়। তাই সবচেয়ে ভালো হচ্ছে নিজের থানাতে বা যে থানাতে থাকা হয় সেই থানাতে গিয়ে জিডি করা।
জিডি কখন এবং কেন করা উচিৎঃ
নিজের বা পরিবারের নিরাপত্তা পেতে বা কোন আইনি সহায়তা পেতে লোকে জিডি করে। পরিবারের প্রতি বা নিজের প্রতি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ দ্বারা হুমকি বা অপরাধ মূলক ক্ষতির আশংকা থাকলে জিডি করা উচিৎ। এছাড়া সার্টিফিকেট, রেজাল্ট শিট, প্রশংসা পত্র বা অন্যকোন প্রয়োজনীয় কাগজাদি হারিয়ে গেলে, দলিল বা চেক বই হারিয়ে গেলে বা গুরুত্বপূর্ণ কাগজাদি হারিয়ে গেলে লোকে জিডি করে।
কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সমাজে অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে বা মাদকসেবী কেও সমাজের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করতে পারে বা করছে এমন তথ্য জানিয়ে যে কেও জিডি করতে পারে। এছাড়া কোন অবৈধ সভা সমাবেশ সম্পর্কিত তথ্য বা বাড়ির কোন ভাড়াটিয়া সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে জিডি করা যেতে পারে। বাসা বা বাড়ির দারোয়ান বা বেতন ভুক্ত কোন কর্মচারী বা নৈশপ্রহরি হারিয়ে গেলে বা তার কোন তথ্য দিয়ে জিডি করতে পারে। এছাড়া আরো অনেক কারনে জিডি করা যেতে পারে। সাধারন্ত যে সকল বিষয়ে সরা সরি মামলা করা সম্ভব নয় শুধু সে সকল ক্ষেত্রেই জিডি করা হয়ে থাকে।
ছাত্র-ছাত্রীদের ইভটিজিং সমস্যা বা কেও ইভটিজং করে বা করতে পারে এমন হুমকির আশংকা থাকলে অবশ্যই জিডি করে রাখা উচিৎ। এছাড়া মোবাইল চুরি গেলে বা কোন সম্পদ কেও নষ্ট করতে পারে এমন আশংকা থাকলে জিডি করা উচিৎ।
জিডি করতে খরচ কতঃ
জিডি করতে কোন প্রকার খরচ নেই। ফর্ম পর্যন্ত ফ্রি এমনকি ফ্রিতে তা দ্বায়িত্তে থাকা পুলিশ পুরোন করতে সহায়তা করবে। তাই জিডি করতে খরচের কোন ঝামেলা বা ভয় নেই।
জিডি কখন গ্রহণ যোগ্যঃ
জিডি করলেই জিডি গ্রহণ যোগ্য নাও হতে পারে। পুলিশ অফিসার জিডির কারন এবং বিবরণ আমল যোগ্য নয় মনে করলে জিডির জন্য তদন্ত নাও করতে পারে বা জিডি আমলে নাও নিতে পারে।
জিডি করণে সাবধানতাঃ
জিডি অবশ্যই সঠিক তথ্য দ্বারা করা উচিৎ। কারন জিডি করার পর অভিযোগ আমল যোগ্য হলে সংশ্লিষ্ট অফিসার তদন্ত করতে পারেন। সুতরাং ভুয়া বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করলে পরবর্তীতে ফেসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কাওকে ঝামেলায় ফেলতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জিডি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে।
জিডি করার উপকারিতা বা গুরুত্বঃ
জিডি একটি প্রমাণ দলিল বা সাক্ষ্য। এটি খুবি গুরুত্বপূর্ণ উপকারি দলিল। এর উপকারিতা অপরিসীম। জিডি করার পর কেও অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে জিডির কপি দেখিয়ে মামলা করা বা আইনী সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। কোন অপরাধের কেও সাক্ষী না থাকলে জিডি করা থাকলে জিডি স্বাক্ষী দলিল হিসাবে কাজ করে। এছাড়া মোবাইল বা কোন দলিলাদি হারিয়ে গেলে আইনী সহায়তা পেতে জিডি অত্যাবশ্যক একটি বিষয়।
আমরা সাধারন্ত জিডি করতে অনীহা প্রকাশ করি কিন্তু আগে থেকে জিডি করা থাকলে ইভটিজিং বা এমন কোন অপরাধ ঘটার পূর্বেই রোধ করা সম্ভব। নিজের জান ও মালের বা পরিবারের সুরক্ষায় তাই জিডির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
তাহলে আজ এপর্যন্তই ---
শুভকামনায়---
কে-মাহমুদ
০৯-১১-২০২০
নিচের বক্সে কমেন্ট করুন। আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের নিকট খুবি গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার কমেন্টের উত্তর আমরা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দিতে চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
1timeschool.com
EmoticonEmoticon